ঝাড়গ্রামে বৃহস্পতিবার আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের পর রাতে থেকে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার নেতা-বিধায়কদের দেখে শুধু বলেছিলেন, কাল তোদের সঙ্গে বসব! ওমনি উৎকন্ঠা শুরু হয়ে গিয়েছিল দলের মধ্যে। কী জানি, কী নাচছে কপালে!
হলও তাই। পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রামে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। তার পর জেলা সংগঠনে এরই মধ্যে রদবদল করেছেন তৃণমূলনেত্রী। ঝাড়গ্রামের দায়িত্বও রেখেছেন নিজের হাতেই। সেই মোতাবেক শুক্রবার দুপুরে জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মমতা।
সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই তুমুল বকুনি দেন গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতোকে। জানেনও না মানুষের কী চাই! যান মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। চায়ের দোকানে গিয়ে বসুন।
চূড়ামণির নিজের এলাকা গোপীবল্লভপুরেই এ বার পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি-র কাছে ডাহা হেরেছে তৃণমূল। তার পর অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী পদ থেকে অপসারণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে বকুনি খেতে হয় স্থানীয় সাংসদ উমা সোরেনকেও। মমতাকে তাঁকে বলেন, তোমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ! তুমি মানুষের সঙ্গে মেশো না! কথা বলো না! তা হলে তুমি কীসের এমপি? উমাকে তৃণমূল নেত্রী নির্দেশ দেন, এলাকার বিধায়ক, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, নেতা নেত্রীদের নিয়ে মিলে মিশে চলতে।
কয়েক দিন আগে তুমুল বৃষ্টিতে ঝাড়গ্রাম শহরে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়। শহরে নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যার জন্যই সেই অবস্থা হয়। সে প্রসঙ্গ টেনে পুর কাউন্সিলরদের ধমক দিয়ে মমতা বলেন, এলাকার খবর নিন। মানুষের সুবিধা অসুবিধার কথা জানুন। মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে যে পর্যটন আবাসে রয়েছেন, বৃষ্টিতে ঠিক তার পিছনের এলাকায় জলে ডুবে গিয়েছিল। তাতে বেশ কিছু মাটির ঘর বাড়ি ভেঙে যায়।
ঝাড়গ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান দুর্গেশ মল্লদেবের ভাই জয়দীপ মল্লদেবের কাছে মমতা জানতে চান, কেন এলাকাটি জলে ভেসে গেল! জয়দীপ অভিযোগ করেন, পর্যটন দফতর তাঁদের কথা শোনেনি। ইচ্ছা মতো কাজ করেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি জানান, ওখানে যে খাল কাটা হয়েছে তা ১২ ফুট চওড়া করতে বলা হয়েছিল। তা হয়নি। খালটি কোথাও পাঁচ ফুট চওড়া তো কোথাও চার ফুট। তার জন্য জল বেরোতে পারছে না। এ কথা শুনেই পূর্তমন্ত্রী ও সেচ মন্ত্রীকে ফোন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখে খাল সংস্কারের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তৃণমূল সূত্রের মতে, ঝাড়গ্রামের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মানুষের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। এমন নয় যে সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলের উপর মানুষ ক্ষেপে রয়েছে। মানুষ রেগে রয়েছে কিছু নেতার উপর। তাই ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়ে এলাকার মানুষকে বার্তা দিতে চাইছেন মমতা। তাঁদের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছেন। এবং এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে নেতাদের বকেছেন বা ধমকেছেন সেটুকু বার্তা বাইরে গেলেও তৃণমূলের উপকার হবে। অন্তত মানুষ বুঝবে ঝাড়গ্রামের উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতা রয়েছে।
Be the first to comment