তখন প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন অটল বিহারী বাজপেয়ি। সেসময় মহারাষ্ট্র নির্বাচনে হার হয়েছে BJP-র। মহারাষ্ট্রে জয়ের আশা ছিল BJP-র শীর্ষ নেতৃত্বের। বিশ্বাসও ছিল। যদিও বাস্তবে হারতে হয়। পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণের জন্য বাজপেয়ি তাঁর শীর্ষ মন্ত্রী ও দলের অন্য নেতাদের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। দলের পরাজয়ের কারণ হিসেবে এক নেতা অভিযুক্ত করেন জোটের শরিক শিবসেনাকে। দ্বিতীয় একজন মুসলিম ভোট না পাওয়ার কথা বলেন। দুর্বল সংগঠনের কারণেই মহারাষ্ট্রে দলের পরাজয় হয়েছে বলে জানান তৃতীয়জন। বাজপেয়ি সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য অরুণ শৌরি বলেন, “সবাই অন্যদের দোষারোপ করছিল। বাজপেয়ি তাঁদের সব কথা শোনেন। এবং তাঁর মুখে ক্ষীণ হাসি দেখা যাচ্ছিল।” শৌরি জানান, সবার সব কথা শোনার পর বাজপেয়ি বলেন, “সুতরাং, এই পরাজয়ের কোনও নতুন কারণ নেই … আসুন চা খাই।” শৌরি আরও জানান, বাজপেয়ি তাঁর ওই সংক্ষিপ্ত বাক্যের মধ্যে দিয়ে দলকে স্পষ্ট বার্তাও দিয়েছিলেন।
বাজপেয়ি মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য ছিলেন অরুণ শৌরি। তিনি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বিভিন্ন বিষয়ে বাজপেয়িকে তিনি শ্রেষ্ঠ মনে করেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “তিনি (অটল বিহারী বাজপেয়ি) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি অন্যদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে পারতেন। কিছু নেতা আছেন যারা অন্যদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জিনিসটা দেখেন।” তিনি আরও বলেন, “বাজপেয়িজি সবাইকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতেন। বর্তমান NDA সরকারের মধ্যে এর বিপরীত প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকার জন্য বিরোধী দলের নেতারা এই সরকারকে অভিযুক্ত করছে।”
কেন্দ্রের বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকারের তীব্র সমালোচক শৌরির আরও স্মৃতিচারণা, “অটল বিহারী বাজপেয়ি তাঁর মন্ত্রিসভার সকলের বক্তব্য শুনতে চাইতেন। এমনকী কোনও কোনও সময় প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানির বলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অন্যরা বলার সুযোগ পেতেন। অটলজি চোখ বন্ধ করে সব শুনতেন তারপর মাঝে মাঝে বলতেন হ্যাঁ। ঠিক আছে। এগিয়ে চলুন।”
শৌরি জানান, একবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার DMK-র সদস্যরা তামিলনাড়ু পুলিশের হাতে হেনস্থা হয়েছিল। সেসময় তামিলনাড়ু সরকারকে বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পক্ষে মত দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু, বাজপেয়ি সেপথে যেতে রাজি হননি। বরং তিনি বলেন, DMK-র মন্ত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো উচিত। তারা আমাদের মিত্র।” শৌরির মতে, বাজপেয়ি কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করার দাবিতে মান্যতা দেননি সেদিন। কারণ, বাজপেয়ি বন্ধু অথবা বিরোধী, কোনও দলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে রাজি ছিলেন না।
Be the first to comment