বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ক্রিকেট মাঠে যেভাবে দুধর্ষ প্রতিপক্ষকে সামলেছেন, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রেও কি তা পারবেন? পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কাজটা সহজ হবে না । কারণ মারাত্মক সব চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে আছে প্রশাসক ইমরানের জন্য।
অর্থনীতির বেহাল দশা
আর কিছুদিনের মধ্যেই ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ক্রাইসিসে পড়তে পারে পাকিস্তান। তার মানে বিদেশ থেকে পাকিস্তান যে পণ্য আমদানি করে, সেসবের দাম দেওয়ার মতো অর্থ থাকবে না কোষাগারে। ইমরানের সরকারে যিনি অর্থমন্ত্রী হবেন, সেই আসাদ উমর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, আইএমএফের কাছে ঋণ চাইব কিনা, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সেপ্টেম্বরের শেষে। কিন্তু আইএমএফের কাছে চাইলেই পাকিস্তান যে ঋণ পাবে এমন নয়। কারণ আমেরিকার আশঙ্কা, ঋণ পেলে সেই অর্থে পাকিস্তান চিন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম দেবে। আইএমএফের প্রধান ডোনার দেশ আমেরিকা। তারা আপত্তি করলে আইএমএফ ঋণ দিতে পারবে না।
গত পাঁচ বছরে পাকিস্তানে বাজেট ঘাটতি বেড়েছে। বিদেশী মুদ্রার ভাণ্ডারও তলানিতে। ইমরান বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াবেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি খরচ করবেন। কীভাবে অত অর্থ পাবেন, তিনিই জানেন।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ: সন্ত্রাসবাদ
পাকিস্তানে গত কয়েক বছরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বটে কিন্তু তাতে তাদের ক্ষমতা কতদূর কমেছে সন্দেহ। গত নির্বাচনেই নানা জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা ২০০ জনের মৃত্যু ঘটিয়েছে। ইমরান বলেছেন, জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তাদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনবেন। অনেকে ভয় পাচ্ছেন, ইমরান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে জঙ্গিরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে না তো?
তৃতীয় চ্যালেঞ্জ : জনসংখ্যা বৃদ্ধি
বিশ্ব ব্যাঙ্ক বলেছে, এশিয়ার যে দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি, তার অন্যতম পাকিস্তান। দেশে পরিবার পরিকল্পনা চালু আছে খুব কম অঞ্চলে। পাকিস্তানের মানুষ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনাও পছন্দ করেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে জন্মহার কমাতে না পারলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে । পাকিস্তানে যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, তাতে অত মানুষের কুলোবে না। ইমরান নিজে আগে কখনও পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে মুখ খোলেননি। এবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করেন, সেদিকে নজর থাকবে অনেকের।
চতুর্থ চ্যালেঞ্জ: জলসংকট
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ২০২৫ সাল নাগাদ পাকিস্তানের এক বিশাল অংশে জলসংকট দেখা দেবে। প্রত্যেক মানুষ তার প্রয়োজনীয় জল পাবে না। সেই বিপর্যয় এড়ানোর জন্য অবিলম্বে সতর্ক হতে হবে। পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে ইমরানের রেকর্ড খারাপ নয়। খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলে, যেখানে তাঁর শক্ত ঘাঁটি, সেখানে তিনি বহু সংখ্যক গাছ পুঁতেছেন।
পঞ্চম চ্যালেঞ্জ: মিলিটারি
স্বাধীনতার পর থেকে গত ৭১ বছরের অর্ধেক সময়ই পাকিস্তান কাটিয়েছে সামরিক শাসনে। একাধিকবার অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে সেনাবাহিনী। এর আগে নওয়াজ শরিফ সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক একেবারেই ভালো ছিল না। অনেকের ধারণা, সেনাবাহিনীর সাহায্যে ইমরান ক্ষমতায় এসেছেন। ইমরান অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি কারও সাহায্যে ক্ষমতায় আসেননি। আগামী দিনে সেনাবাহিনীর প্রভাব থেকে নিজের সরকারকে রক্ষা করা তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ।
Be the first to comment