আবার কি সে এসেছে ফিরিয়া? এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে লালগড়বাসীর মনে। প্রশ্নের নেপথ্যে ফের সেই ডোরাকাটা দক্ষিণ রায়। না, এ বার ক্যামেরায় কোনও বাঘের ছবি ধরা পড়েনি, তবে বাঘ ঘিরে জোরদার আতঙ্ক দানা বেঁধেছে গ্রামবাসীদের মনে।
হঠাৎ কেন এই আতঙ্ক? উত্তর জোগালেন লালগড়ের বাঁধগড়া এলাকার বাসিন্দা অশ্বিনী মানা। তিনি বলেন, রোজকার মতো শনিবারও তাঁর দু’টি গরু জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন। গত বছর নানা কসরত করে রয়্যাল বেঙ্গল নিধনের পর মোটামুটি শান্তিতেই ছিলেন সুবলবান্দি, কাদড়া, জিরাপাড়া-সহ গোয়ালতোড়ের আদিবাসীরা। রুজি রুটির জন্য জঙ্গলে শালপাতা কুড়োতে যাওয়া থেকে গরু, ছাগল চড়ানো সবই চলছিল নির্বিঘ্নেই।
অশ্বিনীর কথায়, সন্ধে হয়ে যাওয়ার পরেও গরুগুলি না ফেরায় তাদের খোঁজ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টার পর গরুগুলি ঘরে ফেরে, কিন্তু রক্তাক্ত অবস্থায়। কারওর গায়ে গভীর আঁচড়ের দাগ, কারওর পায়ে রয়েছে ক্ষত। বাছুরটি সারা গায়ে ছিল আঁচড়-কামড়ের দাগ। মাথার পিছনের দিকে কামড়ের গভীর ক্ষত। বাঘ বা ওই জাতীয় প্রাণির আক্রমণ ছাড়া এমন ক্ষতের দাগ হয় না বলেই জানিয়েছেন তিনি। তাই, ফের একবার বাঘের উপস্থিতি ঘিরে রহস্য ছড়িয়েছে বাঁধগড়ায়।
গত বছরে বাঘ নিয়ে যেমন নাকানিচোবানি খেতে হয়েছিল বন দফতরকে সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই গতকালের এই ঘটনা কার্যত ফের অস্বস্তিতে ফেলেছে বন কর্তাদের। যদিও বাঘই ওই আক্রমণে মূলে রয়েছে কি না সেই বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় বন দফতর। মেদিনীপুর ডিভিশনের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেছেন, “আমি খবর পেয়েছি। তবে গরুর গায়ের আঁচর দেখে মনে হচ্ছে না ওটা বাঘের। তবুও গতবার এ রকমই হয়েছিল, পড়ে জানা গিয়েছিল সত্যিই বাঘ।” গোটা ঘটনাটাই সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বন দফতরের একটি প্রতিনিধি দল বাঁধগড়া গ্রামে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত বছরও লালগড়ের জঙ্গলে এ ভাবেই আক্রান্ত হয়েছিল কয়েকটি গরু। ঝাড়গ্রাম জঙ্গল এলাকার গ্রামবাসীরাও বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন। তার পর ২ রা মার্চ বন দফতরের ক্যামেরায় ধরা পড়ে মেলখেরিয়ার জঙ্গলে বেশ দুলকিচালেই হেঁটে বেড়াচ্ছে ডোরাকাটা দক্ষিণরায়। যে জঙ্গল একসময় মাওবাদী-ঘাঁটি ছিল, যেখানে দলমার দাঁতালরা দাপিয়ে বেড়ায়, সেখানে বাঘের হদিসে হইচই পড়ে। বাঘ কোত্থেকে, কোন পথে এল তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা।
বাঘ ধরার জন্য খাঁচা, টোপ দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বারে বারেই নাগাল টপকে ফসকে গিয়েছে সে। বাঘ ধরতেই রীতিমতো দক্ষযজ্ঞ শুরু হয়ে যায় লালগড়ের জঙ্গলে। স্থানীয় বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যেরা দাবি করেন বাগঘোরার জঙ্গলে তাঁরা বাঘ দেখেছেন। কখনও জাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে ছুটছেন বনকর্তা-বনকর্মীরা, কখনও বাঘ ধরতে সুন্দরবন থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল। কখনও ছাগলের টোপ, আবার কখনও বাঘের স্বাদ বদলাতে দেওয়া হয় বন্য শুয়োরের টোপ। বাঘের খোঁজে জঙ্গলে ঢুকে আহতও বন জনা কয়েক শিকারী এবং বনকর্মী।
শেষে ১৩ এপ্রিল শিকার উৎসবের দিন বাগঘোরায় মুখে বল্লম গাঁথা অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত বাঘের দেহ মেলে। বন দফতরের কর্তাদের দাবি ছিল, জঙ্গলে শিকারীরাই হত্যা করেছিল বাঘটিকে।
Be the first to comment