গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি-র পড়ুয়াদের আন্দোলনের বয়স ১১ দিন

Spread the love
গত ৮ অগস্ট কলকাতায় পা রেখেছিল ওঁরা। তারপর কেটে গিয়েছে দশ দশটা দিন। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয়নি। ওদের দাবি মেটেনি। তবুও ওঁরা অনড়। ওঁদের একটাই কথা। “হয় বৈধ সার্টিফিকেট নিয়ে বাড়ি ফিরবো, নয়তো আমাদের লাশ ফিরবে।” শহর কলকাতায় মালদা গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি-র পড়ুয়াদের আন্দোলনের বয়স আজ ১১ দিন।
সেই বুধবার থেকে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে বসে রয়েছেন জনা দশ-বারো ছেলে। দাবি একটাই। হাতে যে সার্টিফিকেট রয়েছে সেটা কীসের সমতুল্য তা জানাক কলেজ কর্তৃপক্ষ। সময় এগিয়েছে। কিন্তু কোনও সমাধান মেলেনি। বরং টান পড়েছে পকেটে। ফুরিয়ে গিয়েছে সঙ্গে আনা রসদও। কার্যত লোকের কাছে হাত পেতেই পেট চলছে ওঁদের। আর এই অসহায়তার মধ্যে বাধ সেধেছে প্রকৃতিও। টানা বৃষ্টিতে রাত-দিন ভিজছে ওঁরা। মাথার উপর ত্রিপল টাঙানোর অনুমতিটাও মেলেনি। ইতিমধ্যেই, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিন পড়ুয়া। যেদিকে যাচ্ছেন শুধু সমস্যাই তাড়া করে বেরাচ্ছে ওঁদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেদের দাবিদের অনড় বছর একুশ-বাইশের এই ছেলেগুলো।
আন্দোলনরত এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, “এসে থেকে রাজ্যপাল, শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সবার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছি। দোরে দোরে ঘুরছি। কিন্তু কোথাও কোনও পজিটিভ উত্তর নেই।” তবে এখনও আশা হারাননি ওঁরা। গত রবিবার ১২ অগস্ট একটি কনভেনশন ডেকেছিলেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। সাড়াও মিলেছিল তাতে। আগামী সোমবার ২০ অগস্ট ফের কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই ‘গনিখান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’-র পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রেসিডেন্সি এবং যাদবপুরের পড়ুয়ারা। তাই সোমবারের কনভেনশন নিয়েও আশাবাদী জিকেসিআইটি-র পড়ুয়ারা। এই প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, “সবার কাছে, সমাজের সব মানুষের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের পাশে দাঁড়ান। এমনিতেই এখানে আন্দোলন চালাচ্ছি বলে ওখানে(মালদায়) নিয়মিত বাড়ির লোককে হ্যারাস করছে কলেজ কর্তৃপক্ষের পোষা গুণ্ডারা। আমার বাবাকেই বলেছে, ছেলেকে সরিয়ে আনুন। আন্দোলন বন্ধ করতে বলুন। নয়তো জানে মেরে দেবো। মানসিক ভাবে খুব চাপে আছি। তাই শহরবাসীর কাছে অনুরোধ আমাদের আন্দোলন সফল করতে আমাদের পাশে দাঁড়ান প্লিজ।”
কলকাতার পাশাপাশি আন্দোলন জারি রয়েছে মালদার কলেজেও। কিন্তু সেখানে কার্যত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের অভিযোগ, আন্দোলনকারী ছাত্রীদের নিগ্রহ করেছেন কলেজেরই বেশ কয়েকজন অশিক্ষক কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানিয়েছেন, “আমাদের মারধর করা হয়েছে। শুধু সেটাই নয়। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করা হয়েছে আমাদের। এমনকী ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাদের ধর্ষণ করার হুমকিও দিয়েছেন। বলা হয়েছে, কলেজে সিসিটিভি আছে বলেই আমরা বেঁচে যাচ্ছি। রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি আমরা।” এ বিষয়ে মালদা থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন পড়ুয়ারা। দ্য ওয়ালেরপক্ষ থেকে এই বিষয়ে কলেজের ডিন নীলকান্ত বর্মণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।” যে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের নামে বারংবার অভিযোগ করেছেন পড়ুয়ারা তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। দু’বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
মালদার কলেজে আন্দোলনের বয়স পেরিয়ে গিয়েছে ৫০০ ঘণ্টা। কলকাতাতেও টানা ১১ দিন ধরে রোদে পুড়ে জলে ভিজে আন্দোলন করছেন ‘গনিখান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’-র পড়ুয়ারা। শরীর ক্লান্ত হলেও, ওঁদের জেদটা দিন দিন বাড়ছে। শত আতঙ্ক, শত সমস্যাকে হেলায় হারিয়ে একটাই দাবিতে টিকে রয়েছেন ওঁরা, বৈধ সার্টিফিকেট ওঁদের চাই। এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, “শারীরিক ভাবে মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের মনে জোরটা অনেক। আর ওই জেদের জোরেই তো এখনও আন্দোলনটা চালাচ্ছি। ইনফ্যাক্ট আন্দোলন তো চলবেই। যতদিন না কলেজ আমাদের সার্টিফিকেটের সমতুল্যতা জানাবে ততদিন আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর, আরও কঠিন আন্দোলনে যাবো আমরা। কিন্তু বৈধ সার্টিফিকেট না পাওয়া পর্যন্ত মালদা ফিরবো না আমরা। কিছুতেই না।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*