রানিগঞ্জের গৃহবধূ পুষ্পা ভালোটিয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মন্থা। সিআইডি তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
এই মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর দুপুর আড়াইটেয়। পুষ্পা (৩৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে তাঁর পরিবারকে জানায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পুলিশ সূত্রের খবর, পুষ্পার স্বামী মনোজ ভালোটিয়া প্রথমে দমকলে ও পরে পুলিশে খবর দেন। দমকলকে জানানো হয় যে গ্যাস পাইপ লিক করে আগুন লাগে। তবে দমকলের রিপোর্ট অনুযায়ী, সে ক্ষেত্রে সারা বাড়িতেই আগুন লাগার কথা, যা হয়নি। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পুষ্পাকে প্রথমে রানিগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় মিশন হাসপাতালে। সেখানে পুষ্পাদেবীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুষ্পা দেবীর পরিবারের অভিযোগ, কেন বাড়ির সামনে থাকা মিশন হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল ? পুষ্পার দাদা গোপাল আগরওয়াল বোনের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে রানিগঞ্জ থানার ওসিকে একটি ইমেল ও স্পিড পোস্টের মাধ্যমে অভিযোগ করেন যে তাঁর একমাত্র বোনকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুন করেছেন। পুলিশ প্রথমে কোনো অভিযোগ দায়ের না করলেও পরে ২০১৭-র ৬ নভেম্বর সালে গোপাল আগরওয়ালকে থানায় ডেকে পাঠান। তদন্ত শুরু করে পুলিশ ।
মৃত্যুর কারণ নিয়ে দমকল, পুলিশ ও অভিযুক্তদের দেওয়া তথ্য বেশ ধোঁয়াশা ছিল বলে অভিযোগ। কারণ পুষ্পা দেবীর শরীরে বুলেটের ক্ষত ছিল বসে সূত্রের খবর। তাঁর চোখের ডান দিকে বুলেটের আঘাত থাকলেও কোনো রিপোর্টেই সেটা উল্লেখ ছিল না। তাই রানিগঞ্জ পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডি-কে। কিন্তু সিআইডি সঠিক তদন্ত করছে না এই অভিযোগে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মৃতের পরিবার ।
মঙ্গলবার মামলার শুনানি চলাকালীন আবেদনকারীর আইনজীবী আদালতে বলেন অভিযুক্ত স্বামী মনোজ ভালোটিয়া গত ২১ শে ডিসেম্বর ২০১৭ সালে সিআইডি-কে একটি চিঠি দিয়ে জানায় তাঁর স্ত্রী পুষ্পা ভালোটিয়া আত্নহত্যা করেছেন। তিনি সিআইডি-কে তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করবেন বলেও জানান।
আবেদনকারীর আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, সত্যি কথা কে বলছেন সিআইডি না অভিযুক্ত ? কারণ গত ২৫ শে জুলাই ২০১৮ সালে হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন সিআইডি জানায়, অভিযুক্ত স্বামী মনোজ ভালোটিয়া ফেরার এবং তাঁর মোবাইল ফোনের লোকেশনের খোঁজ চলছে । বিচারপতির প্রশ্ন, সিআইডিকে অভিযুক্ত বাড়ির ঠিকানা জানিয়েছিল। তাহলে সিআইডি কেন তাঁর খোঁজ করলো না। সিআইডি আইনজীবীকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। তিনি সিআইডি এবং রানীগঞ্জ থানার পুলিশকে নির্দেশ দেনা আগামী ৭ দিনের মধ্যেই তদন্তের যাবতীয় তথ্য সিবিআই এর হাতে তুলে দিতে হবে। পাশাপাশি, সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে নির্দেশ দেন একটি স্পেশাল টিমকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে সিবিআই আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
Be the first to comment