প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে রায় ঘোষণা হলো পঞ্চায়েত মামলার। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আসনের ফল ঘোষণা করতে পারবে রাজ্য সরকার। এই রায়ের ফলে স্বস্তিতে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ রায় ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। মূলত দুটি বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হয়েছে এ দিন।
প্রথম বিষয় ছিল অনলাইন বা ই-মেল মনোনয়নের। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, যে সব প্রার্থী অনলাইন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তা গ্রহণ করা হবে। হাইকোর্টের সেই রায় কার্যত খারিজ করে দেওয়া হলো সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জানান, অনলাইন বা ই-মেলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কোনও বিধি নেই। তাই যাঁরা এই পদ্ধতিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় বিষয় ছিল, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৩৪ শতাংশ আসনের কী হবে? সেই প্রসঙ্গে এ দিন দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ৩৪ শতাংশ আসনের ফল ঘোষণা করতে পারবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানানো হয়, যদি পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ ছিল, তাহলে তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল ইলেকশন ট্রাইবুনালে। কিন্তু না গিয়ে তাঁরা মামলা করেছেন। তাই গোঁড়াতেই গলদ রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জানানো হয়, যদি মনোনয়ন জমা নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে দিন ৩৪ শতাংশ আসনের ফল ঘোষণার কথা জানাবে তার ৩০ দিনের মধ্যে ইলেকশন ট্রাইবুনালে তাঁরা আবেদন জানাতে পারে।
এই রায় ঘোষণার পর স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। রায় ঘোষণার পর তৃণমূল কংগ্রেসের আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ এই রায়ে আমরা খুব খুশি। আমি যে বিষয় নিয়ে কোর্টে যুক্তি দেখিয়েছিলাম, সেগুলোই গ্রাহ্য করেছে আদালত। এই রায় বিরোধীদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যের মা-মাটি-মানুষের জয়।’
পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এই রায় ঐতিহাসিক রায়। বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সততার জয় হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলোর শক্তি আরও বাড়ল। আমরা সাত দিনের মধ্যেই সব কাজ করে ফেলব। এর ফলে পঞ্চায়েতে উন্নয়নের আরও গতি বাড়বে।’
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ মিলিয়ে ২০১৫৯ আসনে বিরোধীরা কোনও মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বলে হাইকোর্টে মামলা করেছিল বিজেপি। বিস্তর অভিযোগ ছিল তাদের। কখনও ই-নমিনেশন ঘিরে, কখনও আবার নিরাপত্তা নিয়ে। মনোনয়ন জমা নেওয়ার দিন বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি জারি করেও তা প্রত্যাহার করে নেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন, সেই নিয়েও অভিযোগ করে তারা। বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন রাজ্যের শাসক দলের চাপেই এই কাজ করেছে কমিশন। মামলা গড়ায় দেশের শীর্ষ আদালতে। সুপ্রিম কোর্ট ভোট করার অনুমতি দিলেও আটকে দেয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের শংসাপত্র দেওয়া। আদালত জানিয়ে দেয় কোনওভাবেই তাঁদের সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে না।
তারপরে বারবার মামলার শুনানির দিন পিছিয়েছে। এর মধ্যেই রাজ্য সরকার ঘোষণা করে যতদিন না ফল ঘোষণা করা হচ্ছে ততদিন ওই আসনগুলিতে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। তারপরেই এ দিন দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিল পঞ্চায়েত মামলার।
Be the first to comment