গত বুধবার কেরলের এর্নাকুলাম জেলার কোথাড় অঞ্চলে আত্মঘাতী হয়েছেন এক ৬৮ বছরের বৃদ্ধ। বন্যার সময় তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ত্রাণশিবিরে। জল নামতে ভেবেছিলেন বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু কোথায় বাড়ি? বাড়ি ভেঙেচুরে মাটিতে মিশে গিয়েছে। ধ্বংসস্তূপের ওপরে বালির প্রলেপ। সাধের বাড়ির ওই হাল দেখে তিনি হতাশায় আত্মঘাতী হয়েছেন।
তার কয়েকদিন আগে কেরলে আত্মঘাতী হয়েছিল এক ১৯ বছরের যুবক। বন্যায় পরীক্ষা পাশের সার্টিফিকেট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সে হতাশ হয়ে পড়েছিল।
ঈশ্বরের আপন দেশে বন্যার জল যত নামছে, ততই বাড়ছে হতাশা। কীভাবে রাজ্যের পুনর্গঠন করা যাবে, তা নিয়ে অন্ধকারে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বলে চলেছে, এই বিপর্যয় মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু পুনর্গঠন নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা পেশ করতে পারেনি মোদী সরকারও।
বন্যায় মোট ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। ২০ থেকে ৫০ হাজার বাড়ি হয় মাটিতে মিশে গিয়েছে, অথবা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩ লক্ষ মানুষ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন ৩৩০০ ত্রাণ শিবিরে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকা।
কোথা থেকে আসবে এত টাকা? এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির তথাকথিত অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়েছিলেন, আমিরশাহি বন্যাত্রাণে ৭০০ কোটি ডলার দিতে প্রস্তুত। পরে ভারতে নিযুক্ত আমিরশাহির দূত আহমেদ আলবান্নাম বলেছেন, করলে ত্রাণ দেওয়ার জন্য আমরা একটি কমিটি বানিয়েছি। কিন্তু কী পরিমাণে ত্রাণ দেওয়া হবে ঠিক হয়নি।
বিজয়ন জানিয়েছেন, অনাবাসী ব্যবসায়ী এম এ ইউসুফ আলি তাঁকে জানিয়েছেন, আমিরশাহি ৭০০ কোটি টাকা দিতে চায়। ইউসুফ যখন আমিরশাহির যুবরাজের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তিনি নিজে একথা বলেছেন।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার নিজের অবস্থানে অবিচল। বিপর্যয় মোকাবিলায় বিদেশের সাহায্য নেওয়া হবে না। ২০০৪ সালে সুনামিতে যখন হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন, তখনও বিদেশ থেকে সাহায্য নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার জরুরি ভিত্তিতে কেরলকে ৬০০ কোটি টাকা দিয়েছে। পরে আরও সাহায্য দেওয়া হবে জানিয়েছে। কিন্তু ঠিক কত টাকা দেওয়া হবে, কীভাবে পুনর্গঠন হবে, এখনও জানানো হয়নি।
Be the first to comment