উত্তর-দক্ষিণ জেলা মিলিয়ে পাঁচ-পাঁচটা ঘটনার পর এ বার ‘মোমো সুইসাইড চ্যালেঞ্জ’-এর মেসেজ এল খোদ পুলিশ কর্মীর কাছে। চেনা ভঙ্গিতেই মোমো পরিচয় দিল এ ভাবে ‘হাই, আই অ্যাম মোমো’। কম যান না মহিলা পুলিশও, তাঁর সপাটে জবাব ‘হাই, আই অ্যাম চাউমিন’।
ঘটনার শুরুটা হয়েছে রবিবার রাতে। বান্ধবীদের সঙ্গে হোয়াটস্অ্যাপ চ্যাটে ব্যস্ত ছিলেন শেফালি রায়। ধূপগুড়ি গয়েরকাটা এলাকার বাসিন্দা শেফালি জলপাইগুড়ি আদালতে কর্মরত। তাঁর কথায়, চ্যাটে এতটাই মশগুল ছিলেন প্রথমে বিষয়টা বুঝতে পারেন নি। ভেবেছিলেন কেউ মজা করছে। তবে নম্বরটাও বেশ উদ্ভট ছিল বলেই জানিয়েছেন তিনি।
+১(৫৭৩)৩৯৪-৩৪৩৯ নম্বর থেকে প্রথম মেসেজ ঢোকে তাঁর মোবাইলে। শুরুতেই অ্যাডমিন তার পরিচয় দিলে শেফালি বেশ রসিয়েই উত্তর দেন। তার পর শুরু হয় কথোপকথন। কখনও শেফালিকে গেম খেলার জন্য অনুরোধ করা হয়, কখনও আবার জানতে চাওয়া হয় তিনি বাঙালি কিনা। চ্যাটের শুরুটা ইংরাজিতে হলেও শেষে রোমান হরফে বাংলাতেই প্রশ্ন করতে শুরু করে অ্যাডমিন। আবার প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব না পেলে ধমকধামকও শুরু হয়। চ্যাট থেকেই স্পষ্ট শেফালিকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
ভারত, চিন, জাপান, রাশিয়া, কানাডা-সহ নানা দেশে মারণ খেলা ‘মোমো’-র অ্যাডমিন এবং সেই গ্রুপের আরও নানা সদস্য ছড়িয়ে রয়েছে সেটারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়। গোটা ঘটনাটা নিয়ে এখনই কোনও এএফআইআর করেননি শেফালি। তিনি জানিয়েছেন তাঁর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে শুধু বিষয়টা জানিয়েছেন তিনি।
খোদ পুলিশ কর্মীর কাছে ‘মোমো’ খেলার মেসেজ আসায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে গয়েরকাটার বাসিন্দাদের মধ্যে। ‘মোমো’ খেলার লিঙ্ক মোবাইলে ঢোকা মানেই এখন সেটা খবর। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ির পি ডি কলেজের দুই ছাত্রী-সহ উত্তর চব্বিশ পরগনা, কালিয়াগঞ্জের ছাত্রের কাছে এই খেলার নিমন্ত্রণ এসেছে। ‘মোমো’ খেলতে দেখা গিয়েছে মেদিনীপুরের সূর্য ও কালিয়াগঞ্জের রাজেশকে। তাই আতঙ্ক একটা ছিলই। এ বার পুলিশের কাছেই ‘মোমো’র মেসেজ আসায় সেই আতঙ্কের পারদ চড়েছে আরও কয়েক ডিগ্রি।
তার উপর ফের মাথা চাড়া দিয়েছে কয়েকটি প্রশ্ন। সন্দেহটা তো ছিলই, সেটাই এখন স্পষ্ট হচ্ছে ধীরে ধীরে। তার মানে এ রাজ্যেও তৈরি হয়েছে মারণ খেলা ‘মোমো’-র একাধিক অ্যাডমিন। +১(৫৭৩)৩৯৪-৩৪৩৯ নম্বটির বৈধতা এখনও নিশ্চিত করেনি পুলিশ। তবে, এটা কোনও মজা না হয়ে যদি সত্যিই এই খেলার কোনও অ্যাডমিনের কাছ থেকে এমন মেসেজ এসে থাকে তাহলে চিন্তার বিষয় রয়েছে।
প্রথমত, এই জাতীয় সুইসাইড গেম সাধারণত স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদেরই মেসেজ পাঠায়। কিন্তু, বর্তমানে খেলার লিঙ্ক আসা শুরু হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের কাছেও।
দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি ‘মোমো’র মেসেজ এসেছে উত্তর চব্বিশ পরগনার সোদপুরের বাসিন্দা রাজশ্রী দাসের কাছে। তিনি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। অন্যদিকে, এই ঘটনার পর পরই ‘মোমো’ খেলার নিমন্ত্রণ এল ধূপগুড়ির এক মহিলা পুলিশ কর্মীর কাছে।বিষয়টা নতুন ভাবনার জন্ম দিচ্ছে।
তৃতীয়ত, সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, তাহলে কি এই খেলার অ্যাডমিনেরা অনেক বেশি তৎপর হয়ে উঠছে? শুধু বিদেশে নয়, দেশেও ছড়িয়েছে তাদের অজস্র শাখা।
চতুর্থত, কোনওভাবে বিদেশের কোনও গ্রুপ বা অনলাইন গেমের সঙ্গেও কি তাদের যোগসূত্র রয়েছে? কারণ প্রতিটি নম্বরই আসে বাইরের কোনও কোড থেকে। কিন্তু, মেসেজ পাঠানো হয় কখনও ইংরাজিতে, আবার কখনও রোমান হরফে বাংলাতে।
Be the first to comment