মুখ্যমন্ত্রীর ধারণায় শিলমোহর দেওয়া আরও একটি ঘটনার উদ্ঘাটন। শূন্যপদটি ছিল এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের। এবং তপশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। অভিযোগ, সেই পদেই গত দু বছর ধরে জমিয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন সংরক্ষণের আওতার বাইরে থাকা জেনারেল ক্যাটাগরির এক শিক্ষক। এ ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়ালো উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
UBKV / Rect /01/2015 Dt – 09 / 03 / 2015 এই নম্বরে বেশকিছু পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে একজনকে নিয়োগের জন্যে নোটিফিকেশনে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই পদটি ছিল তপশিলি জাতির প্রার্থীর জন্যে সংরক্ষিত।
অভিযোগ, এই পদে যোগ দিয়েছেন ত্রিপুরার বাসিন্দা এক শিক্ষক। যাঁর নাম লিটন দাস। তিনি সেই রাজ্যের তপশিলি জাতিভুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের একাংশের বক্তব্য, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চাকরির ক্ষেত্রে রাজ্যের বাইরের প্রার্থী হলে তাঁকে সাধারণ ক্যাটাগরি হিসেবে গণ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ত্রিপুরার তপশিলি জাতির তালিকায় থাকা প্রার্থী, পশ্চিমবঙ্গে তপশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আসনে চাকরি পেলেন কীভাবে ? ভুলই যদি হয় তবে ২ বছরের বেশি সময়েও সেই ভুল সংশোধন হল না কেন?
অধ্যাপক ও কর্মচারীদের একাংশ এই নিয়োগের পিছনে অশুভ আঁতাতের গন্ধ পাচ্ছেন। বিতর্কের কেন্দ্রে যিনি সেই অধ্যাপক লিটন দাস বলেন, “ভুল যদি হয়ে থাকে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমি আবেদন করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইন্টারভিউতে ডেকেছে আর ইন্টারভিউ দেওয়ার পরেই চাকরিতে যোগ দিয়েছি।” তপশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত পদের ব্যাপারে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতির বিরুদ্ধে ওই শিক্ষক প্রশ্ন তুললেও, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে তরফে জানানো হয়েছে এই বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। যদি অভিযোগ জমা পরে তবে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কোথাও বলেছেন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের এক নেতার। তাঁর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ গত ২৬/১০/২০১৬ এবং ২১/১১/২০১৬ তারিখে নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয়ে অনিয়ম নিয়ে রাজ্যের তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকে জানিয়েছিলেন। যার প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছিল উপাচার্যকেও। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানেন না তা সঠিক নয়।
পরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতেই উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিরন্তন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অন্য রাজ্যের তপশিলি জাতির প্রার্থী আমাদের এখানে সাধারণ ক্যাটাগরিই গণ্য হবেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
তবে সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কী ভাবে তপশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত পদে ভিন রাজ্যের তপশিলি প্রার্থীকে নিয়োগ করা হল? কী ভাবেই বা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে যারা সার্টিফিকেট স্ক্রুটিনি করেছে তাঁদের চোখ এড়িয়ে এত বড়ো ভুল হল তার কোনও উত্তর মেলেনি।
Be the first to comment