সর্বহারাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সকলেই, এবার সেই তালিকায় যোগ এক বন্দীর নামও

Spread the love

বন্যাবিধ্বস্ত কেরল। গত এক সপ্তাহে মহা জলপ্লাবন কেড়ে নিয়েছে চারশো’রও বেশি প্রাণ। ঘরছাড়া প্রায় লক্ষাধিক। সরকারি সাহায্য ছাড়াও দেশের নানা প্রান্ত থেকে সর্বহারাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিশিষ্ট জন থেকে আমজনতা। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এক বন্দীর নামও।

বন্যাদুর্গতদের জন্য নিজের জমা করা এক লক্ষ টাকা দান করার আবেদন জানিয়েছেন যাবজ্জীবনের সাজা প্রাপ্ত ওই বন্দী। জেল সূত্রে খবর, ওই বন্দীর নাম শেখ ইজাজ। বয়স হয়েছে ৭৩ বছর। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আলিপুর সংশোধনাগারেই যাবজ্জীবনের সাজা কাটছেন তিনি।

শেখ ইজাজ আদতে কেরলের বাসিন্দা। নিজের জন্মভূমির এমন করুণ পরিস্থিতি দেখে তাঁর প্রাণও কেঁদে উঠেছে। জেল কর্তৃপক্ষেরা জানিয়েছেন, কেরলবাসীদের দুর্দশার খবর শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি তিনি। তাই নিজের জমাপুঞ্জি এবং জেল থেকে আয়ের সবটাই তুলে দিতে চান সর্বহারাদের কল্যাণের কাজে। সর্বহারাদের কল্যাণের কাজে।

১৯৯৩ সালে বৌবাজার বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত রসিদ খানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন এই শেখ ইজাজ। দীর্ঘদিন রসিদ খানের সঙ্গে কলকাতাতেই কাটিয়েছেন। বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পর ধরা পড়ে যাবজ্জীবনের সাজা দেওয়া হয় তাঁকে। জেল সূত্রে খবর, এই দীর্ঘ ২৫ বছরে তাঁর সঙ্গে জেলে দেখা করতে আসেননি কেউই। এমনকি নিজের জন্মস্থান এবং পরিবারের লোকজন সম্পর্কেও কোনওদিন জেল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও কথাই বলেননি শেখ ইজাজ। তাই কেরলের ঠিক কোথায় তাঁর বাড়ি, কে কে রয়েছেন তাঁর পরিবারে, এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষেরা কিছুই জানেন না। জেলের খাতায় শুধু লেখা রয়েছে, তিনি কেরলের বাসিন্দা। এইটুকুই তাঁর পরিচয়।

তবে, নাম বা পরিচয় দিয়ে কি বা আসে যায়! আসল তো হল কোনও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা, মানবিকতা, হৃদয়বত্তা। অতীত যাই হোক না কেন, নিজেকে সংশোধন করে মানবিকতার যে বৃহৎ নজির তিনি গড়েছেন তা শুধু জেল কর্তৃপক্ষদের নয়, গর্বিত করবে গোটা দেশকেই। কারণ, এটাই তো সংশোধনাগারের আসল উদ্দেশ্য। সাজা দেওয়ার অর্থ অপরাধীকে অছ্যুত করে দেওয়া নয়, বরং তার অপরাধকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। তাহলেই তার প্রকৃত সংশোধন সম্ভব। আর এটাই সম্ভব হয়েছে আলিপুর সংশোধনাগারে।

শেখ ইজাজের ইচ্ছার কথা ইতিমধ্যেই ডিজি (কারা)-র কাছে জানানো হয়েছে এবং তাঁর আবেদন মঞ্জুরও হয়েছে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*