সারদা কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার-সহ চার আইপিএস কর্তাকে সম্প্রতি তলব করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সূত্রে বলা হচ্ছে, তৃণমূলের এক প্রাক্তন সাংসদকে খুব শিগগির তলব করতে পারেন তাঁরা। পাশাপাশি, নারদ কাণ্ডের তদন্তে ইদানীং ফের সক্রিয় হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এমনকী আয়কর দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, কয়েক জন পুলিশ কর্তাকে নোটিস পাঠিয়েছেন তাঁরা।
পরিস্থিতি যখন এমনই তখন মঙ্গলবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভা থেকে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ফের ক্ষোভ উগরে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, উনিশের ভোট আসছে। তাই লাফালাফি বেড়ে গেছে। ইনকা খিলাফ সিবিআই করনা হ্যায়, উনকে খিলাফ সিবিআই করনা হ্যায়! এর পরই হুমকির সুরে মমতা বলেন, “এ ভাবে ধমকে চমকে লাভ নেই! আমরাও বুঝে নেব ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে”। তাঁর কথায়, “সারদা-র যখন জন্ম হয়েছে, তখন তৃণমূল জন্মায়নি। বামেদের সময় চিটফান্ডের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। আমাদের সময়ে নয়। চিটফান্ডের টাকা তৃণমূলের দরকার নেই।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এমনিতেই রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা বিজেপি নেতা মুকুল রায়রা উঠতে বসতে বলছেন, তৃণমূলের কিছু নেতা-মন্ত্রীর দিকে গুটি গুটি পায়ে সিবিআই এগোচ্ছে। তা ছাড়া রাজনৈতিক মহলে ধারণাই হল, লোকসভা ভোটের আগে চিটফান্ড ও নারদ কাণ্ড নিয়ে সক্রিয় হবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। সম্ভবত সেই কারণেই এখন থেকে পাল্টা আক্রমণের জমি তৈরি করে রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের অনেকে আশঙ্কা করছেন, পরিকল্পনা মাফিক কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে লেলিয়ে দিচ্ছে বিজেপি। প্রথমেই পুলিশ কর্তাদের ডাকা হচ্ছে। বিজেপি জানে, মূলত পুলিশ ও আমলাদের দিয়ে দল এবং সরকার দুটোই চালান মমতা। আর তাই পুলিশ ও আমলাদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য চার পুলিশ কর্তাকে নোটিস পাঠিয়েছে তারা। হতে পারে একই কারণে কয়েক জন পুলিশ কর্তার কাছে আয়কর বিভাগের নোটিস পাঠানো হয়েছে। এই অবস্থায় প্রশাসন থেকে শুরু করে দলের মনোবল ধরে রাখা মমতার সামনে চ্যালেঞ্জ। সেই কারণেই আক্রমণাত্মক হয়েছেন মমতা।
বাংলায় শাসক দলের মধ্যে এ-ও আশঙ্কা রয়েছে যে লোকসভা ভোটের সময় বাংলায় ভোট প্রচারে উপুড়হস্ত হয়ে খরচ করবে বিজেপি। এমনিতে নির্বাচনী আচরণবিধিতে লোকসভা কেন্দ্র অনুযায়ী খরচের সীমা বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তা যে কেউ মানে না তা বলাই বাহুল্য। তবে তৃণমূল আশঙ্কা করছে, বিজেপি-র সঙ্গে এ ভাবে পেরে ওঠা মুশকিল। এ দিন গান্ধী মূর্তির সভা থেকেও মমতা বলেন, ওঁরা একেকটা ভোট দশ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে পারে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যেন কড়া অবস্থান নেয় সেই দাবিও তুলেছেন মমতা।
Be the first to comment