একদা তাঁদের সম্পর্ক ছিল গলায়-গলায়। একজন তখন শাসক দলের রাজ্যসভার সাংসদ আর অন্যজন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার। কুণাল ঘোষ এবং অর্ণব ঘোষ। এরপর মাঝে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে গ্যালন গ্যালন জল। এখন সারদা মামলায় জামিনে মুক্ত কুণাল আর সল্টলেক থেকে অনেকটা দূরে মালদার পুলিশ সুপার অর্ণব। ২০১৮ সালে অগাস্টের শেষ তারিখে সেই অর্ণবের বিরুদ্ধেই তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিলেন কুণাল।
বিষয় পঞ্চায়েতে হিংসা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরু হতেই শুরু হয়ে যায় পেশী শক্তির আস্ফালন। কোথাও শাসক বনাম শাসক আবার কোথাও শাসক বনাম বিরোধী। সেই হিংসাতেই বৃহস্পতিবার মালদার মানিকচকে মাথায় গুলি লাগে একটি শিশুর। মালদা মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সেই শিশুটি। আর এই ইস্যুতেই শুক্রবার দুপুরে একটি ফেসবুক লাইভ করে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ।
কুণাল অভিযোগ করেন, “এত বোমা-গুলি ওখানে মজুত হলো কীভাবে? কেন পুলিশ প্রশাসনের কাছে জবাব চাওয়া হবে না। মানিকচকে কয়েকদিন আগেও জিশান শেখ নামের একটি শিশু আক্রান্ত হয়েছিল। কে মারছে, কাকে মারছে এগুলি রাজনৈতিক চাপানউতোরের বিষয়। কিন্তু অস্ত্র এল কোথা থেকে পুলিশ কি আঙুল চুষছিল?”
জেলে থাকার সময় কুণালকে একাধিকবার সরকার এবং রাজ্যের শাসক দলের শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শোনা গিয়েছিল। কুণালের কথা চাপা দিতে পুলিশকে দেখা গিয়েছিল প্রিজন ভ্যানের টিন বাজাতে। তবু বারবার ফুঁসে উঠতেন কুণাল। অনেকের সঙ্গে নাম করতেন বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার অর্ণব ঘোষেরও। কিন্তু জামিন পাওয়ার পরেই শুরু হয় মেঘ-রোদের খেলা। গতবার নিজের পাড়ার পুজো উদ্বোধনে ডেকে নিয়ে যান একদা তৃণমূলের সেকেন্ডম্যান মুকুল রায়কে। তখন বিজেপি-তে যোগ না দিলেও তৃণমূল ছাড়ার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন মুকুলবাবু। অনেকে ভেবেছিলেন কুণাল বোধহয় মুকুল শিবিরে গিয়ে উঠবেন। কিন্তু তা আর হয়নি। বরং পুজোর পরেই কুণাল বলেন সারদার ব্যাপারে মুকুল রায় সব জানেন। ক্রমেই শাসক দলের কাছে আসতে শুরু করেন এই ‘বিতর্কিত’ সাংসদ। গত ৩ জুন তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে যান কুণাল। সঙ্গে কোচবিহারের জেলাপরিষদের ২৩ নম্বর আসনে জয়ী নির্দল প্রার্থী কৃষ্ণকান্ত বর্মন। নির্দল থেকে কুণালের হাত ধরে উন্নয়নের টানে শাসক শিবিরে যোগ দেন কৃষ্ণকান্ত। এরপর একুশে জুলাইয়ের মঞ্চেও দেখা যায় কুণালকে।
এ দিন সন্ধে বেলা কুণালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মানিকচকে ধারাবাহিক হিংসা চলছে। এত অস্ত্র। কেন অর্ণব ঘোষকে বেঁধে রাখা হবে না? কেন অর্ণব ঘোষের মেডেল খুলে নেওয়া হবে না।” কিন্তু পঞ্চায়েতের হিংসা তো মালদায় শুধু নয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হচ্ছে। তাহলে কি ইস্যু পেয়ে পুরনো রাগ মেটাচ্ছেন কুণাল? সাংবাদিক তথা প্রাক্তন সাংসদের উত্তর, “মোট আসনের তুলনায় হিংসা তুলনা করলে দেখা যাবে এমন কিছু নয়। কিন্তু মালদায় পরপর দুটি শিশু আক্রান্ত হলো। একই জায়গায়। একদল বলছে ভিন রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে লোক ঢুকছে। অন্যদল বলছে রাজ্যের শাসক দল হিংসা ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমার একটাই প্রশ্ন, এত অস্ত্র এল কোথা থেকে? এটাতো একদিনে হয়নি। পুলিশ কী করছিল?”
কুণালের আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানতে দ্য ওয়াল-এর পক্ষ থেকে ফোন করা হয়েছিল মালদার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষকে। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। এসএমএস করা হয় তাঁকে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত জবাব আসেনি এসএমএস-এরও।
Be the first to comment