নিকাহ হালালা প্রথার মাধ্যমে জোর করে শ্বশুরের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছে মোরাদাবাদের এক মহিলাকে। সেই শ্বশুর নাকি আবার দিনের পর দিন তাঁকে ধর্ষণও করেছে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। মহিলার শ্বশুর ছাড়াও ওই মহিলার স্বামী, স্বামীর কাকা এবং আরও দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
কী এই ‘নিকাহ্ হালালা’?
‘নিকাহ হালালা’ প্রথায় কোনও মুসলমান ব্যক্তি নিজের ডিভোর্স দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি পান। তবে তার একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে যাকে বলে ‘ইদ্দত’। এই পদ্ধতিতে সেই ডিভোর্স দেওয়া স্ত্রীকে অন্য আরেক পুরুষ বিয়ে করেন। একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে সেই পুরুষের সঙ্গে থাকতে হয় ওই মহিলাকে। তারপর ফের ওই পুরুষ তাঁকে ডিভোর্স দিলে তবেই তাঁর প্রাক্তন স্বামী ওই মহিলাকে দ্বিতীয় বার বিয়ে করার অনুমতি পান।
পুলিশ জানিয়েছে, মোরাদাবাদের বাসিন্দা ওই মহিলার বিয়ে হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। মহিলার অভিযোগ, ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি নিজের শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। তিনি জানান নিয়মিত তাঁকে হেনস্থা করছে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এরপর অবশ্য ওই বছরেরই ২৪ ডিসেম্বর বোঝাপড়া হয় দুই পক্ষের। শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান ওই মহিলা।
কিন্তু ফের শুরু হয় সমস্যা। পুলিশের কাছে অভিযোগ করে ওই মহিলা জানিয়েছেন, শ্বশুরবাড়িতে ফেরার পর তাঁর শ্বশুর, স্বামী, স্বামীর এক কাকা এবং আরও দুই ব্যক্তি তাঁকে বলে যেহেতু সে এতদিন বাড়ির বাইরে ছিল তাই তাঁর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। এরপর তাঁকে ‘নিকাহ্ হালালা’ প্রথার জন্য রীতিমতো জোর করা হয়। বলা হয় নিজের শ্বশুরকে বিয়ে করতে হবে তাঁকে। মহিলার অভিযোগ, তিনি যাতে পালাতে না পারেন সেই জন্য তাঁর শ্বশুরের সঙ্গেই একটি ঘরে তাঁকে আটকে রাখা হয়। অভিযোগ, সেই সময় তাঁকে ধর্ষণও করে তাঁর শ্বশুর। এরপর নিকাহ্ হালালা প্রথা অনুযায়ী মহিলাকে ডিভোর্স দেন তাঁর শ্বশুর। এবং জোর করেই তাঁর স্বামীর সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিয়ে দেওয়া হয় ওই মহিলার।
পুলিশের কাছে গোটা ঘটনার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলা। জেলাশাসকের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, পুলিশ এবং জেলাশাসকের কাছের শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পর থেকেই নানাভাবে হেনস্থা হতে হচ্ছে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে। এমনকী শ্বশুরবাড়ির লোকেদের তরফে প্রাণনাশের হুমকিও পাচ্ছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে ১ সেপ্টেম্বর ওই মহিলার স্বামী, শ্বশুর, স্বামীর কাকা এবং আরও দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গণধর্ষণের মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
Be the first to comment