ছবি- (প্রশান্ত দাস)
প্রচণ্ড শব্দ করে একেবারে প্রায় মাঝামাঝি জায়গা থেকে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল দক্ষিণ শহরতলির মাঝেরহাট ব্রিজ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভেঙে পড়ার মুহূর্তে ব্রিজের উপর ছিল পাঁচ-ছ’টি গাড়ি ও একটি মিনিবাস। যে গুলি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। কিন্তু নীচে? পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, নীচে শুধু পথচলতি গাড়ি, বাস, বাইক নেই, রয়েছে পুরোদস্তুর একটি বস্তিও। ফলে বেশ কয়েকজন হতাহতের আশঙ্কা। প্রাথমিক ভাবে খবর, অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৯।
মাঝেরহাট স্টেশনের কাছে রেললাইনের উপর দিয়ে গিয়েছে উড়ালপুলটি। ভেঙে পড়ার সময় মাঝেরহাট স্টেশনের কাছেই ছিল একটি ট্রেন। বলতে গেলে প্রায় কপাল জোরে বেঁচে গিয়েছেন তার যাত্রীরা।
এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ব্যস্ত ডায়মন্ডহার রোডের উপর এই উড়ালপুলটি ভেঙে পড়তেই প্রথমে ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে যান স্থানীয় লোকজন। এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু তার পরেই হই হই করে উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন এলাকার মানুষ। ব্রিজের উপর রবীন্দ্রনগর রুটের মিনিবাস ও গাড়িগুলি থেকে প্রথমে যাত্রীদের উদ্ধার করেন তাঁরা। উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে অন্তত পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর পরেই শুরু যায় ব্রিজের নীচে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার।
ততক্ষণে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও দমকল কর্মীরাও পৌঁছে যায় অকুস্থলে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও। শুধু উদ্ধার কাজে তদারকি করা নয়, নিজেই হাত লাগান পুলিশ কমিশনার। তা ছাড়া ঘটনার খবর পেয়েই কাছে ক্যান্টমেন্ট এরিয়া থেকে বেরিয়ে এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছে সেনাবাহিনী।
সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই পাঁচ জনের প্রাণহানি হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দার্জিলিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কত জন মারা গিয়েছেন বা আহত হয়েছেন, সেই সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এক জনের মৃত্যু হয়ে থাকলেও তা দুর্ভাগ্যজনক। মমতা বলেন, “আমি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে বলেছি ঘটনাস্থলে যেতে।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ব্রিজের নীচে ছিল লেবার রুম। সেখানেও অনেকে আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ব্রিজের মাঝের অংশটাই ভেঙে পড়েছে। ৩০ থেকে ৩৫ জন শ্রমিক লেবারদের রুমে ঘুমিয়েছিলেন বলে খবর। ব্রিজের কাজ চলছিল। সেই কাজের যুক্ত ছিলেন শ্রমিকরা। ব্রিজের উপরের তুলনায় নীচেই বেশি মানুষের আটকে থাকার আশঙ্কা। ব্রিজের নীচে ছিল একটি অফিসঘরও।
স্থানীয়রা বলছেন, তার নীচে অনেকেই আটকে থাকার আশঙ্কা। ব্রিজের উপর থেকে ২০ থেকে ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক দমকল আধিকারিক। ভাঙা অংশ না সরালে বোঝা যাচ্ছে না ব্রিজের নীচে কতজন আটকে রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ব্রিজ ভাঙ্গায় রীতিমতো কম্পন অনুভূত হয়েছে। ব্রিজে ফাটল ছিল বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। ব্রিজের উপর পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত দেহ, দোমড়ানো গাড়ি। আপাতত বন্ধ বজবজ শাখার রেল পরিষেবা।
সন্ধে বেলা ঘটনাস্থলে যান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে কথা বলে রাজ্যপাল বলেন, “ওই ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণে আরও যত্ন নেওয়া উচিৎ ছিল। শুনেছি ওখানে অনেকদিন ধরে একটা গর্ত ছিল। জানি না পূর্ত দফতর ব্যবস্থা নিয়েছিল কিনা। গোটা ঘটনার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।”
Be the first to comment