বেড়েই চলেছে সেলফি ম্যানিয়া, তবে মনোবিদরা জানাচ্ছেন এটা অসুস্থ মানসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়

Spread the love
নাম প্রভাত নস্কর। বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ বাইকে চড়ে পেরিয়ে গিয়েছিলেন মাঝেরহাট ব্রিজ। তার মিনিট কুড়ির মধ্যেই বিকট শব্দ করে ব্রিজ ভেঙে পড়ে। প্ৰভাতবাবু ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে মোবাইল নিয়ে এসেছেন ভাঙা অংশের সেলফি তুলতে। মেয়েকে সেই ছবি দেখিয়ে বলবেন, কীভাবে একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছেন সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে।
প্ৰভাতবাবু এক নন। ব্রিজের ভাঙা অংশের সেলফি তোলার জন্য জড়ো হয়েছেন শ’খানেক লোক। সেলফোন, সেলফি স্টিক, ডিজিট্যাল ক্যামেরা, সব আছে তাঁদের হাতে। এর আগে বিবেকানন্দ রোডে যখন ফ্লাইওভার ভেঙে অনেকের মৃত্যু হয়েছিল কিংবা রবিনসন স্ট্রিটে কঙ্কাল কাণ্ডের কথা জানাজানি হয়েছিল, তখনও ঘটনাস্থলে সেলফি তোলার ভিড় হয়েছিল ।
গত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে, বড় ধরনের কোনও বিপর্যয় বা দুর্ঘটনা হলেই অনেকে সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন সেলফি তোলার জন্য। মনোবিদরা অনেকে বলেছেন, এ হল অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। কিন্তু কলকাতায় ডিজাস্টার ট্যুরিজম অর্থাৎ বিপর্যয় পর্যটনের প্রবণতা বাড়ছে।
প্রভাত নস্করের মতো মধ্যবয়সী যেমন মাঝেরহাট ব্রিজে সেলফি তুলতে গিয়েছিলেন, তেমনই সেই ভিড়ে ছিলেন দুই যুবক, রণদীপ মিত্র ও জুম্মান রহমান। তাঁরা মোমিনপুরে গাড়ির শো রুমে কাজ করেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ দুই বন্ধুতে মিলে ব্রীজ ভাঙা দেখতে এসেছেন। সেলফিও তুলছেন। তাঁরা বললেন, সিনেমায় এমন সিন দেখায়। সত্যি সত্যি কখনও দেখিনি। তাই কাছ থেকে ব্রিজ ভাঙা দেখার সুযোগ ছাড়তে চাইনি।
রাজবীর সিং আর প্রকাশ যাদব নামে দুই টিন এজার কলেজছাত্র খুব মন দিয়ে ত্রাণকার্যের ছবি ক্যামেরাবন্দি করছে। তারা ব্রিজ ভেঙে পড়ার ঘটনা নিয়ে ডকুমেন্টারি বানাতে চায়।
একজনকে দেখা গিয়েছে ধ্বংসস্তূপের কাছে দাঁড়িয়ে ভিডিও কল করছেন। তিনি বলেছেন, আমার বোন বেঙ্গালুরুতে থাকে। সে জানতে চায়, ভাঙা ব্রিজটা এখন কীরকম দেখতে হয়েছে।
মাঝেরহাট ব্রিজের কাছ দিয়ে যখন ট্রেন যাচ্ছে, তখনও জানলায় ভিড় করছেন অনেকে। জানলা দিয়েই মোবাইল বাড়িয়ে ছবি তুলছেন।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*