তারিখটা ২২ মে। স্তব্ধ হয়ে গেছিল পুরুলিয়া শহর। দোকানপাট তো বটেই বন্ধ করে দিতে হয় ব্যাঙ্কের সদর দরজাও। যেন ধর্মঘটের চেহারা। কী কারণ? না, পুরুলিয়া শহরের বজরং দলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা গৌরব সিংকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানো। সেই গৌরবের মুক্তির দাবিতে বজরঙ্গিদের তাণ্ডবে বনধের চেহারা নিয়েছিল পুরুলিয়া শহর।
এত কিছুর পরেও মুক্তি মেলেনি গৌরবের। অনেকে বলেন, এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ভীষণ কড়া। অবশেষে ১১৪ দিন জেলে থাকার পর কয়েক দিন আগেই বাইরে এসেছেন গৌরব। আর বুধবার যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে এসে সোজা ঘাস ফুলের ঝাণ্ডা হাতে তুলে নিলেন। সঙ্গে ওই জেলার আরও কিছু লোক। যারা সবাই হয় বিজেপি নয় বজরংদলের মতো কোনও না কোনও গেরুয়া সংগঠনের নেতাকর্মী।
বয়স তেত্রিশ-চৌত্রিশের ঘরে হলেও প্রায় দেড় দশকের রাজনীতির অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। একটা সময় ছিলেন এসএফআই নেতা। শুধু নেতা বললে ভুল হবে। একেবারে জেলার শীর্ষ স্থানীয় নেতা। সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি ছিলেন গৌরব। ছিলেন রাজ্য কমিটিরও সদস্য। কিন্তু বছর তিনেক আগে সিপিএম বহিষ্কার করে তাঁকে। অভিযোগ ছিল, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগ। কেয়ার করেননি। সোজা গিয়ে যোগ দেন বজরং দলে। তারপর থেকে গৌরব হয়ে ওঠেন ‘পুরুলিয়ার অমিত শাহ’(এই নামেই ডাকা হত তাঁকে)।
জেল থেকে বেরনোর পরই একের পর এক বোমা ফাটান গৌরব। মাধ্যম সেই সোশ্যাল মিডিয়া। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে একের পর এক স্টেটাস দেন গৌরব। যাতে স্পষ্ট, জেলে থাকার সময় গেরুয়া সংগঠনের কোনও নেতা তাঁর পাশে দাঁড়াননি।
জেলার রাজনৈতিক মহলের মতে, গৌরব ছোট থেকেই ভাল সংগঠক। যখন সিপিএম করতেন তখনও নাকি তিনি মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইতে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভাঙা সংগঠন গুছিয়ে ফেলা তাঁর সহজাত। তাঁদের মতে, যে কারণে সিপিএম থেকে বজরং দল করতে এসেও তাঁর কোনও অসুবিধা হয়নি।
বুধবার অভিষেক ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভার সাংসদ ডাঃ শান্তনু সেনের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন গৌরব। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটা আসলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরই কেরামতি। তৃণমূলের পক্ষ থেকে তিনিই পুরুলিয়া জেলার পর্যবেক্ষক। তাঁদের মতে, নিশ্চই ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ জেনেছেন গৌরবের সাংগঠনিক দক্ষতার কথা। গৌরব ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন এক এসএফআই নেতা বলেন, “তৃণমূল যদি পাশে না দাঁড়াতো, তাহলে ওঁর জেল থেকে বেরনো হতো না।” পর্যবেক্ষকদের মতে, সবটাই ভাবনা চিন্তা করে করা। কারণ সামনেই উনিশের ভোট। আর পুরুলিয়া জেলায় এমনিই পঞ্চায়েত ভোটে শাসক দলের খুব একটা ভাল ফল হয়নি। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে নতুন ইনিংস শুরু করলেন গৌরব।
Be the first to comment