আবার বছর কুড়ি পর! দু’দশক আগে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ নিজেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। সে দিনের ছাপ্পান্ন বছরের ‘ছোড়দা’ এখন বয়সে ও দর্শনে দৃশ্যতই বর্ষীয়ান। শরীরে আগের মতো তাকত নেই! এমনকী, গত বিধানসভা ভোটে চৌরঙ্গী কেন্দ্রে পরাস্ত হওয়ার পর সটান ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, “সংসদীয় রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছি আমি।”
সেই মানুষটি, বাংলার প্রদেশ কংগ্রেসের কিংবদন্তী ছোড়দা তথা সোমেন মিত্রর উপরেই ভরসা রাখলেন রাখলেন রাহুল গান্ধী। একদা বাংলার যে নেতার সঙ্গে প্রচণ্ড তিক্ততা তৈরি হয়েছিল সনিয়া গান্ধীর, সেই সোমেন মিত্রকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে বসালেন রাহুল।
বাংলা কংগ্রেসে বড় বদল বইকি। চমকও বটে! সোমেন মিত্র অবশ্য বিস্মিত নন। বরং আগের মতোই ভারী গলায় বললেন, “কুড়ি বছর আগে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ ছেড়েছিলাম। কেউ কিন্তু আমায় তাড়ায়নি। নিজেই ছেড়েছিলাম। হাইকম্যান্ড যে আমার উপর ভরসা রেখেছে তাতেই খুশি।”
কিন্তু তা তো হল, ফের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদের দায়িত্ব পেয়ে আপনার লক্ষ্যটা কী? জবাবে ততোধিক ভারী গলায় সোমেনবাবুর জবাব, “দেখুন, কুড়ি বছর আগে বাংলার রাজনীতি ছিল অন্যরকম। গত দু’দশকে অনেক বদলে গিয়েছে। তৃণমূলের সবে তখন জন্ম হয়েছে। এখন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করছে কংগ্রেসটাকে কতটা ক্ষয়িষ্ণু করে দেওয়া যায়!”
কিন্তু বাংলায় এই কংগ্রেসকে বাঁচানো সম্ভব? এক্কেবারে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে দল! একে বাঁচাতে পারবেন? সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সভাপতি এ বার কিছুটা রক্ষণাত্মক। বললেন, “হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। ডেভিনিটলি হারকিউলিয়ান টাস্ক। আমি চেষ্টার ত্রুটি রাখব না।”
এ দিকে, সোমেনবাবুর নেতৃত্বে নতুন প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে চার জন ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে। যা বাংলা কংগ্রেসের এতদিনের ইতিহাসে সম্ভবত বিরলতম ঘটনা। বরং এই রেওয়াজ তৃণমূলে রয়েছে। জেলায় গোষ্ঠী কোন্দল রুখতে জেলা সভাপতির পাশাপাশি তিন জন ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট, চার জন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ আকছার তৈরি করা হয় তৃণমূলে। সোমেনবাবুর কমিটিতে যে চারজনকে ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে, বাংলার শাসক দলের নেতারাই বলছেন তাঁদের মধ্যে দু’জন তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন।
সোমেনবাবুকেও এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। যদিও তিনি বলেন, “ওঁরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে অফিসিয়ালি তো কোনও ঘোষণা করেননি। তলায় তলায় কে কী করছেন, কী করে জানব। তা ছাড়া প্রকাশ্যে তো বলছেন যে কংগ্রেসেই রয়েছেন।”
ছোড়দার কাছে এ বার দ্য ওয়ালের আপাতত শেষ প্রশ্ন। নতুন প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি দেখেই অনেকে বলছেন, এই কমিটি নরম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপস করে চলার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। সবটাই হয়েছে উনিশের ভোটে মমতাকে পাশে পাওয়ার দিকে তাকিয়ে। প্রশ্ন শুনে ভগ্নাংশ সেকেন্ড চুপ করে থাকেন সোমেনবাবু। তার পর বলেন, “কে কী বলছেন, জানি না। হাইকম্যান্ড আমার উপরে বিশ্বাস রেখেছে। আমি চেষ্টা করব যাতে বিশ্বাসযোগ্যতা রাখতে পারি।”
Be the first to comment