ইতিহাসের অদ্ভুত সমাপতন, পুরানো চালেই এবার মোদীকে কুপোকাত করতে চান রাহুল; বিস্তারিত পড়ুন!

Spread the love
রাজনৈতিক আক্রমণে এ হেন ভাষার প্রয়োগ নতুন নয়! তিন দশক আগে রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে বোফর্স কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়েও এমনটাই হয়েছিল। বিরোধীরা স্লোগান তুলেছিলেন, গলি গলি মে শোর হ্যায়…।
ইতিহাসের অদ্ভুত সমাপতন। তিন দশক পর সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সেই স্লোগান ফিরিয়ে আনলেন রাজীব পুত্র রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল যে রাফায়েল ডিলকে নরেন্দ্র মোদীর বোফর্স বানাতে চান তা অনেক আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার রাহুলকে ব্রহ্মাস্ত্র জুগিয়েছেন ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কো ওলাঁদ। একটি ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, রাফায়েল নিয়ে চুক্তির সময় মোদী সরকারই বলেছিল, অনিল আম্বানিকে যন্ত্রাংশ বানানোর অর্ডার দেওয়া হোক।
ওলাঁদ যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন ফ্রান্স সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু শুক্রবার ওলাঁদের ওই মন্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী কোনও ব্যাখ্যা দেননি। তবে সূত্রের মতে, ওলাঁদের বক্তব্য খন্ডন করাতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে বিদেশ দফতর। ফ্রান্স  সরকার ও রাফায়েলের নির্মাতা সংস্থা দাসো এর পরই বিবৃতি প্রকাশ করে। দাসো দাবি করে, অনিল আম্বানিকে যন্ত্রাংশ বানানোর অর্ডার দেওয়ার জন্য তারাই বেছে নিয়েছিল। যদিও এর পরেও ওলাঁদ তাঁর বক্তব্যেই অবিচল থাকেন।
শনিবার ওলাঁদের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে রাহুল বলেন, “প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মোদীকে চোর বলছেন। কিন্তু তার থেকে ভয়ংঙ্কর যে প্রধানমন্ত্রী চুপ রয়েছেন। একটা শব্দও উচ্চারণ করছে না। হয় প্রধানমন্ত্রী বলুন ওলাঁদ মিথ্যা কথা বলছেন। নইলে সত্যিটা জানান।” সাংবাদিক বৈঠক করে রাহুল এও বলেন, “বোঝা যাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিপরায়ণ”।
রাহুল এ কথা বলা মাত্রই সোশ্যাল মিডিয়ায় কংগ্রেসের সৈনিকরা নেমে পড়েন। অমিতাভ বচ্চনের বিখ্যাত ছবি ছিল দিওয়ার। তাতে দেখা গিয়েছিল, অমিতাভের হাতে উল্কি করে লিখে দেওয়া হয়েছিল, “মেরা বাপ চোর হ্যায়।” ওই সংলাপকে অনুকরণ করে কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা এ দিন  হাতে পেন দিয়ে লেখেন, ‘মেরা পিএম চোর হ্যায়’। তার পর তা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেন। দেখা যায় বিকেলের মধ্যে টুইটারে ট্রেন্ড করছে #মেরা পিএম চোর হ্যায়। যদিও কংগ্রেসের কোনও প্রাক্তন মন্ত্রী এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে টুইট করেননি।
কিন্তু বিজেপি কংগ্রেসের মতো নয়। সেই প্রমোদ মহাজনের সময় থেকেই বিজেপি-র রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো যুদ্ধে সব চলে! সব। তাই মোদী মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা পর্যন্ত সন্ধ্যা থেকে নতুন হ্যাশট্যাগ তৈরি করে রাহুল তথা কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করতে নামেন। তা হলো #রাহুলকা পুরা খানদান চোর হ্যায়। সন্ধে সাড়ে সাতটার মধ্যেই দেখা যায় কংগ্রেসের হ্যাশট্যাগকে টপকে গিয়েছে বিজেপি-র হ্যাশট্যাগ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কেউ কখনও এভাবে আক্রমণ করেনি। রাহুল যা করেছেন। এ দিন রাহুলকা পুরা খানদান চোর ট্রেন্ডিং-এ গা ভাসিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং বিজেপি-র মন্ত্রীও। বিজেপি কর্মীরা সনিয়ার সঙ্গে বোফর্সের নায়ক কুত্রোচ্চির ছবিও ভাইরাল করে দেয় গেরুয়া ব্রিগেড ।
পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী দিনে রাফায়েল নিয়ে এই আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের ভাষা আরও নীচে নামবে বলেই মনে করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত উনিশের ভোটের ফলাফল কী হবে তা সময় বলবে। তবে গোটা ঘটনায় একটা বিষয় ঠিক যে, চোদ্দর ভোটের পরিস্থিতি আর নেই। মোদী মিথ এখন দৃশ্যতই আক্রান্ত। বড় কথা হলো, আক্রমণ শুধু এখন বাইরে থেকে হচ্ছে না, ভিতর থেকেও হচ্ছে। তা ছাড়া পেট্রল, ডিজেল রান্নার গ্যাসের দাম বাড়া, ভারতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাবের মতো সমস্যা আর ঢেকে রাখা যাচ্ছে না! ফলে এক সময় পাহাড়ের মাথায় বসে নীচে দাঁড়িয়ে থাকা মনমোহন সরকারকে আক্রমণ করা যেমন মোদীর পক্ষে সহজ ছিল, এবং রাহুল তথা কংগ্রেসের পক্ষে তা মোকাবিলা করা কঠিন ছিল, এখন ঠিক পরিস্থিতিটাই ঠিক ঘুরে গিয়েছে। পাহাড়ের উপরে বসে এলোপাথাড়ি ঢিল ছুড়ে চলেছেন রাহুল। বিজেপি-কে তাই এ বার অবধারিত ভাবেই বেশি পরিশ্রম করতে হবে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*