একেই বলে রাখে হরি মারে কে! আসন্ন মৃত্যু একবার নয়, সাত বার থাবা বসিয়েছিল সদ্যোজাতের কচি শরীরে। নরম, তুলতুলে শরীরটা যন্ত্রণা পেলেও মৃত্যুর কাছে হার মানেনি। চিকিৎসকরা বলছেন ওষুধের গুণ, বিশ্ববাসী বলছে চমৎকার!
চমৎকারই বটে। মাত্র তিন দিনের শিশু। তাকে সাত বার বিষাক্ত হুলের ছোবল বসিয়েছে কাঁকড়া বিছে। তার পরেও দিব্যি বেঁচে ফিরেছে সে। ফুটফুটে মুখে মিষ্টি হাসি দিয়ে পরিবারকে জানান দিয়েছে, ‘ভয় পেয়ো না, আমি ঠিক আছি!’
ঘটনাটা ব্রাজিলের। বছর পঁচিশের ফারনান্ডা সবে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। ফুটফুটে শিশু কন্যাটির বয়স মাত্র তিন দিন। নাম তার মারিয়া সোফিয়া। রোজকার মতোই স্নান করিয়ে পরিস্কার জামা ও ন্যাপি পরিয়ে বাচ্চাটাকে শুইয়ে রেখেছিলেন ফারনান্ডা। মিনিট দশেক পর তাকে খাওয়াতে গিয়েই চমকে ওঠেন।
তরুণী জানিয়েছেন, শিশুটির মুখ দিয়ে ফেনা উঠছিল। চোখ-মুখে ফোলা ভাব। হাত-পাও কেমন অসাড় হয়ে গেছিল। ধীরে ধীরে কমে আসছিল হৃদস্পন্দন। দিশাহারা তরুণী শিশুটিকে বুকে নিয়েই ছোটেন হাসপাতালের দিকে। চিকিৎসকরা দেখেন শিশুটির হৃদস্পন্দন প্রায় নেই বললেই চলে। শ্বাসের গতিও থেমে আসছে। তুরন্ত ইঞ্জেকশন দেওয়ার জন্য জামাকাপড় খুলিয়েই শিউড়ে ওঠেন চিকিৎসকরা।
শিশুটির ন্যাপির মধ্যে রয়েছে একটি হলদেটে বিষাক্ত কাঁকড়াবিছে। নাভির কাছে অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ডের ঠিক পাশেই হুল ফুটিয়ে রয়েছে বিছেটি। পরীক্ষা করে ডাক্তারেরা দেখেন মোট সাতবার ছোবল বসিয়েছে ওই বিছেটি। তাঁরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকায় সন্ধান মেলে এমন হলদেটে বিছের। Leiurus quinquestriatus বা bark Scorpion নামে পরিচিত এই বিছেগুলিকে স্থানীয়েরা বলেন মৃত্যুদূত। একবার হুল বসালেই নিশ্চিত মৃত্যু বা পক্ষাঘাত।
শিশুটিকে বাঁচাতে অ্যান্টিবায়োটিকের ছ’টি কড়া ডোজ দেন চিকিৎসকরা। কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় শিশুটি সাড়া দিচ্ছে। হাসি ফোটে সবার মুখে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পরিণত বয়সের মানুষই রেহাই পায়না এই বিছের বিষাক্ত কামড় থেকে, সেখানে শিশুটি দীর্ঘক্ষণ কী ভাবে লড়াই করে গেল সেটাই আশ্চর্যের।
ফারনান্ডার কথায়, তাঁর মেয়ের নবজন্ম হয়েছে। লড়াকু শিশুটি আসলে ঈশ্বরেরই আশীর্বাদ।
Be the first to comment