প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নাম ছিল না, ৩ দিন পর নাম চলে এল তালিকায়

Spread the love

ঠিক যেন পিসি সরকারের ম্যাজিক। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নাম ছিল না। তিন দিন পর নাম চলে এল । সাদা খাতা জমা দিয়েও নম্বর এল। শুধু তাই নয়, ডাবলুবিসিএসে প্রথম স্থান অধিকার করলেন তিনি। প্রশান্ত বর্মণ। আর তাতেই ক্ষুব্ধ বাকি প্রার্থীরা। সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ। এই সব অভিযোগেই বৃহস্পতিবার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান বেশ কিছু পরীক্ষার্থী।

২০১৭ সালের ডাবলুবিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর থেকেই  শুরু হয় গণ্ডগোল। অভিযোগ প্রিলিমিনারি তালিকায় নাম ছিল না প্রশান্ত বর্মণের। তিন দিন পর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তরফে নোটিস দিয়ে জানানো হয় প্রশান্ত বর্মণের ( রোল নম্বর ১৭০০৩৫৩ ) নাম ভুল করে বাদ গেছিল। তিনি মেন পরীক্ষায় বসার যোগ্য।
তারপর জুলাই মাসে মেন পরীক্ষা হওয়ার পর প্রায় ১০ মাস হয়ে গেলেও চারটি আবশ্যিক বিষয়ের উত্তরপত্রের মূল্যায়ন না হওয়ার অভিযোগ ওঠে। খাতা দেখতে কেন এত দীর্ঘসূত্রতা, সে বিষয়ে অভিযোগ জানান পরীক্ষার্থীরা। এমনকী পিএসসি’র তরফে এ ব্যাপারে ওয়েবেলকে মেল করলে ওয়েবেলের তরফে জানানো হয়, উত্তরপত্রগুলি পুনরায় স্ক্যান করে দেখতে হবে। সেক্ষেত্রে পুরোনো স্ক্যান গুলি মুছে ফেলতে হবে। এই বিষয়ে পরীক্ষার্থী থেকে শুরু করে কমিশনের একাংশ আশঙ্কা পকাশ করেন, এর মাধ্যমে উত্তরপত্রে কারচুপি হতে পারে।

তাঁদের আশঙ্কা যে খুব একটা ভুল নয়, তা প্রমাণ হয় মেনস পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর। অভিযোগ ফল প্রকাশের পর নম্বরের ক্ষেত্রে কারচুপি ধরা পরে। নেপথ্যে সেই প্রশান্ত বর্মণ। অভিযোগ, আবশ্যিক ইংরেজি বিষয়ের উত্তরপত্র তিনি সাদা খাতা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ইংরেজিতে তিনি ১৬২ পেয়েছেন। এমনকী আবশ্যিক বাংলা বিষয়ের উত্তরপত্রে তিনি কেবল একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। তাতে ১৮ পেলেও ফল প্রকাশের পর সেটিকে ১৬৮ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন পরীক্ষার্থীরা।
এমনকী অভিযোগ ওঠে ইন্টারভিউয়ের তালিকার উপরেও। প্রথমে পিএসসি’র মাধ্যমে গ্রুপ এ ও বি মিলিয়ে ৭৩৯ জনের নাম ও রোল নম্বরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তা মুছে ফেলে শুধুমাত্র ৭২৪ জনের রোল নম্বরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। পিএসসি’র তরফে জানানো হয় ১৫ জনের নাম ভুল করে তাঁদের তালিকায় চলে এসেছিল।

এই নম্বর বেড়ে যাওয়া ও আবশ্যিক বিষয়ের নম্বরের তথ্য ভাণ্ডার মুছে ফেলার অভিযোগে হাইকোর্টে দায়ের হয় দুটি জনস্বার্থ মামলা। একটি মামলা করেন পিএসসি’র অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রামচন্দ্র ভট্টাচার্য্যর তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য্য। অন্য মামলাটি করেন সমাজসেবী পর্ণালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে আইনজীবী গৌরব বসু। কিন্তু মামলা চলাকালীনই ডাবলুবিসিএস এক্সিকিউটিভের (মেনস) ফল প্রকাশ করে দেয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন। সেখানে দেখা যায় প্রথম হয়েছেন প্রশান্ত বর্মণ। ফল প্রকাশের পরেই পিএসসি’র উপর আঙুল তোলেন বেশ কিছু পরীক্ষার্থী।
এর সঙ্গে যুক্ত হয় পিএসসি ফায়ার অপারেটর পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ। বৃহস্পতিবার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন বেশ কিছু পরীক্ষার্থী। তাঁদের দাবি, যেহেতু ফায়ার অপারেটরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে তাই নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হোক। সেই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে কাট অফ ও ফল প্রকাশেরও দাবি জানান তাঁরা। এ ছাড়াও কী করে প্রশান্ত বর্মণ সাদা খাতা জমা দিয়ে এত নম্বর পেলেন, সে বিষয়েও পিএসসি’র কাছে জবাবদিহি চান তাঁরা।
এক পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, ” এত পরিশ্রম করার পর যদি দেখি একজন সাদা খাতা জমা দিয়ে এত নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে, তাহলে তো খারাপ লাগবেই। পাবলিক সার্ভিস কমিশন ও ডাবলুবিসিএসের মতো এত বড় পরীক্ষাতেও যদি দুর্নীতি হয়, তাহলে সেটা সাংঘাতিক। তবে আমরাও আন্দোলন থেকে সরছি না। এর উত্তর পিএসসি’কে দিতেই হবে।”

এ দিন পরীক্ষার্থীদের তরফে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়েছে পিএসসি অফিসে। তবে এ ব্যাপারে পিএসসি’র চেয়ারপার্সন দীপঙ্কর দাশগুপ্তের তরফে কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*