পাকিস্তানের উদ্দেশে তোপ দাগলেন সুষমা স্বরাজ, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে ঠিক কী কী বললেন তিনি? পড়ুন!

Spread the love
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে পাকিস্তানের উদ্দেশে তোপ দাগলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। চাঁচাছোলা ভাষায় পড়শি দেশের মুখোশ খুলে দিলেন সুষমা।
ভারত ও পাক বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যে সীমান্ত বিষয়ক আলোচনার কিছুক্ষণ আগেই সেই আলোচনা থেকে সরে আসে ভারত। এই বিষয় নিয়ে বারবার পাকিস্তানের তরফে ভারতের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। সেই বিষয়েই এ দিন জবাব দেন সুষমা। তিনি বলেন, ভারত আলোচনায় রাজি হওয়ার ৩ ঘণ্টা পরেই পাক জঙ্গিদের হাতে কাশ্মীরে তিন পুলিশকর্মী মারা যান। সেই কারণেই আলোচনা থেকে সরে আসে ভারত।
কোনও রাখঢাক না রেখে সরাসরি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে বিদেশমন্ত্রী বলেন, ” ভারতের অভ্যন্তরে জঙ্গিরা জায়গা পায় না। কিন্তু বর্ডারের অন্য দিকে তো তাদের থাকার অনেক জায়গা। আমাদের প্রতিবেশীরা জঙ্গিদের অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে। অথচ অন্যদিকে মুখে ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকা তাদের একটা স্বভাব।
এই প্রসঙ্গে লাদেনের কথা টেনে আনেন সুষমা স্বরাজ। তিনি বলেন, আমেরিকার ইতিহাসে সবথেকে বড় জঙ্গি হামলা হলো ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা। আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা পাকিস্তানই কিন্তু সেই ৯/১১ হামলার মাস্টারমাইন্ড ওসামা বিন লাদেনকে নিজেদের দেশে লুকিয়ে রেখেছিল। মার্কিন সেনা গোপনে খবর পেয়ে সেখানে ঢুকে লাদেনকে মেরে আসে। এর থেকেই প্রমাণ জঙ্গিদের কতটা বন্ধু পাকিস্তান।
জঙ্গিদের সাহায্য করা বা তাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তান যে কতটা দরাজ তার বহু প্রমাণ আছে বলে দাবি করেন সুষমা। তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হামলার মাস্টারমাইন্ড ওসামা বিন লাদেনকে নয় আমেরিকা পাকিস্তানে গিয়ে মেরে এসেছিল, কিন্তু ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম কুখ্যাত হাফিজ সঈদ এখনও বহাল তবিয়তে পাকিস্তানেই আছে বলে দাবি বিদেশমন্ত্রীর।
দু দেশের মধ্যে জঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য বারবার যে ভারতের দিকে পাকিস্তান আঙুল তোলে, সেটাও সম্পূর্ণ ভুল বলেই বক্তব্য সুষমা স্বরাজের। তিনি বলেন, দু দেশের মধ্যে জঙ্গি সমস্যা মেটানোর জন্য অনেকবার আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু যদি তা বন্ধ হয়েছে, সেটা পাকিস্তানের ব্যবহারের জন্যই। ভারত এতে দায়ী নয়।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে সুষমা স্বরাজ বলেন, মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নিজের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্ক ভুক্ত সব দেশের প্রধানদের আমন্ত্রণ করছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের তরফে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকী ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর সুষমা নিজে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব নিয়ে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। কিন্তু ২ জানুয়ারি পাঠানকোট সেনা ছাউনিতে হামলা চালায় পাক সেনা। সুষমা প্রশ্ন করেন, এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আলোচনা সম্ভব।
সুষমা বলেন, পাকিস্তান দিনের পর দিন অভিযোগ করেছে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সেটা কী কখনও জঙ্গি কার্যকলাপের থেকে বড় হতে পারে? প্রশ্ন করেন সুষমা। সাধারণ মানুষকে বিনা কারণে খুন করে তারা আবার মানবাধিকারের পাঠ ভারতকে শেখাতে আসে, এটাই আক্ষেপ তাঁর।
এমনকী ভারতকে নিচু দেখানোর জন্য যে কোনও পর্যায় পর্যন্ত পাকিস্তান যেতে পারে বলেই তাঁর বিশ্বাস। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গত বছর রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা ভারতের কিছু ছবি দেখিয়ে দাবি করেছিলেন, ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। পরে দেখা যায় সেগুলো ভারতের ছবিই না, অন্য কোনও দেশের। এর থেকেই বোঝা যায় মিথ্যে অপবাদ দিতে পাকিস্তানের জুড়ি মেলা ভার।
পাকিস্তানে কীভাবে জঙ্গিদের সম্মান দেওয়া হয়, সেটাও তুলে ধরেন বিদেশমন্ত্রী। উদাহরণ হিসেবে তিনি জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির প্রসঙ্গ তুলে আনেন। সুষমা বলেন, জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির সেনার হাতে মৃত্যুর পর সম্প্রতি পাকিস্তানের তরফে তাকে শহিদের তকমা দিয়ে পোস্টাল স্ট্যাম্প প্রকাশ করা হয়েছে। এটাই সব কিছু পরিষ্কার করে দেয়।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে পাকিস্তানের মুখোশ সবার সামনে খুলে ফেলে সুষমা সব দেশকে আহ্বান জানান, সবাই মিলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে রোখার শপথ নিতে। তার জন্য দরকার পড়লে চুক্তি করতে হবে। ভারত সন্ত্রাসবাদকে মুছে ফেলতে সব সময় রাজি বলে জানান বিদেশমন্ত্রী।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*