শোলার সাজ আজ রীতিমত দামি। চাহিদা যত বাড়ছে। ততই কমছে যোগান। বিভিন্ন বিল, জলাশয়ে এখন নগরায়নের থাবা। আগের মত শোলা চাষ আজ আর সহজ নয়। বায়না এলেও তাই ছাড়তে হচ্ছে কাজ। শোলার অভাবে চরম সঙ্কটে কুমারটুলির শোলাশিল্পীরা।
মণ্ডপসজ্জার কদম ফুল, চাঁদ মালা থেকে দুর্গার মুকুট, শাড়ি। সবেতেই শোলা। নিজে থেকেই শোলা জন্মায় বিল, জলাশয়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জলে নেমে সাপ,জোঁকের সঙ্গে লড়াই করে শোলা তুলে আনেন এক শ্রেণির মানুষ। বিভিন্ন মালাকারের হাতের গুণে তাই হয়ে ওঠে অপরূপ সাজের অঙ্গ।
ঠিক যেমন কুমারটুলির শম্ভূনাথ মালাকার। পঞ্চাশ বছর ধরে শোলার কাজ করছেন। বাপ-ঠাকুর্দার দেখানো পথেই শোলা নিয়ে কারিকুরি। সংসারের হালও শোলার হাতেই। ধবধবে সাদা শোলার প্রতি টানে অন্য কোন পেশাও বেছে নেওয়া হয়নি। হাজার প্রতিকূলতার মধ্যে আজও ভালবেসেই কাজ করেন শিল্পী।
বছর দশেক আগেও ছবিটা অন্যরকম ছিল। ভাঙড়, রাজারহাট, দুই চব্বিশ পরগনা ছাড়াও শোলা চাষ হত দিনাজপুর, মালদহ, বর্ধমান, হুগলিতে। এখন বেশিরভাগ জলাশয়ের দখল নিয়েছে বহুতল। আজ শোলা মেলে বনগাঁ, বসিরহাট, মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুরে। কিছু শোলা আসে ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা থেকেও। চাষ কম হওয়ায় দামও বেশি। বছর দশেক আগেও পাঁচ থেকে সাতটি শোলার বান্ডিল বিক্রি হত পনের থেকে কুড়ি টাকায়। এখন বান্ডিল প্রতি দাম তিরিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা।
চাষ কম। তাই শোলার আমদানিও তলানিতে। আগে সপ্তাহে দুদিন উল্টোডাঙা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শোলার হাট বসত। এখন বসে একদিন। তাতেও ভালো শোলা মেলে না। গতবছরও বেশ কয়েকটি শোলার প্রতিমা বিদেশ গেলেও, এবার সংখ্যাটা কমেছে। এমনকি বিদেশ থেকে বায়না এলেও , শোলার অভাবে কাজ করতে পারছেন না শিল্পীরা।
শোলার জায়গায় এসেছে ফাইবার। অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত। এখন সুদিন ফেরার আশায় কুমারটুলির শোলাশিল্পীরা।
Be the first to comment