মোবাইল অ্যাপের সুবাদে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকার লেনদেন এখন পুরোমাত্রায় ডিজিটাল। তবে এখনও এই ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত নয় বেশিরভাগ মানুষই। সেই সুযোগ নিয়েই শহরের আনাচ কানাচে জালিয়াতির ব্যবসা ফেঁদে বসেছে নানা চক্র। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, এমনই চার অপরাধীকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্র ব্যাঙ্ক কর্মচারীর পরিচয় দিয়ে মানুষকে প্রতারণা করত। আজানা নম্বর থেকে ফোন করে অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক জটিলতা নিয়ে গ্রাহককে বোঝানোর চেষ্টা করত। তাদের নির্দেশে মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে টাকার লেনদেনও করেছেন অনেকে। এক তদন্তকারীর কথায়, অনলাইন ব্যাঙ্কিংয়ে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর সময় মোবাইলে ওটিপি নম্বর আসে। সেই নম্বর গ্রাহকের থেকে জেনে নিয়ে অভিযুক্তেরা মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বেশ কয়েকবার।
পুলিশ অনেকদিন ধরেই সন্ধান করছিল এই চক্রের। সম্প্রতি, দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার বিজয়কুমার শ্রীবাস্তব পুলিশের কাছে এসে লিখিত অভিযোগ করেন যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তিনি জানান, গত ২২ জুলাই, দুপুর ৩টে নাগাদ তাঁর কাছে একটা ফোন আসে। নিজেকে এসবিআই-এর কর্মচারী পরিচয় দিয়ে একজন বিজয়বাবুকে বলে মোবাইলে ‘SBI BHIM APP’ ডাউনলোড করতে। এতে KYC লাগে না। ফলে, ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটও নেই কোনও। তাছাড়া, প্রথম প্রথম টাকা পাঠানোর সময়ে কোনও সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য সমস্তরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিল লোকটি। টাকা লেনদেনের সময় বিজয়বাবুর মোবাইলে আসা ওটিপি তাকে জানিয়ে দিলেই সে বাকিটা বুঝে নেবে।
সেই ব্যক্তির নির্দেশ মেনে বেশ কয়েকবার ওই অ্যাপের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করার পরই তিনি দেখেন দেখেন তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে ৬৩,৩৪০ টাকা। পুলিশ তদন্ত করে দেখে, বিজয়বাবুর অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা টাকায় বারাণসীর বিগ বাজার থেকে ছ’টি মোবাইল কেনা হয়েছে। মোবাইল-ব্যবহারকারীকে জেরা করে তদন্তকারী অফিসারেরা জানতে পারেন, তিনি এই ফোন কিনেছেন স্থানীয় দোকান থেকে। সেই দোকানের ফোন-বিক্রেতাও আবার ফোনটি কিনেছেন অন্য একজনের থেকে। এইভাবে, একাধিক ফোন-বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অবশেষে অফিসাররা খোঁজ পান এই মোবাইলের মূল সরবরাহকারীর। নাম, অভিষেক কুমার সিংহ। চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা। এই অভিষেক প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডা। তাকে জেরা করেই আরও তিন জনের খোঁজ পায় পুলিশ। তাদের নাম মহম্মদ আফজল, বিশাল রবিদাস এবং কল্যাণ দাস। আফজল বাদে বাকি দু’জন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তিনজনের কাছ থেকে উদ্ধার হয় মোট ৩০টি নতুন মোবাইল ফোন।
Be the first to comment