রাত ভোর হওয়ার অপেক্ষা। তারপরেই অকাল দীপাবলীর উৎসবে মাতবে গোটা জলপাইগুড়ি। এমনটাই চলে আসছে বছরের পর বছর। পিতৃপক্ষের শেষে বাজি ফাটিয়ে দেবীবরণ এই শহরের দস্তুর।
মহালয়ার ভোরে বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে যখন রেডিওয় কান পাতেন বাসিন্দারা, ঠিক তখনই তুঙ্গে ওঠে বাজির শব্দ। তাই আগের সন্ধে থেকেই পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা বাজির দোকানে ভিড় জমান আট থেকে আশি। আলো ফুটলে অনেকেই চলে আসেন তিস্তা বা করলার পারে। পূর্ব পুরুষের স্মৃতি তর্পণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কেউ। বাকিরা দেবীপক্ষের সূর্যকে প্রণাম জানিয়ে বাড়ি ফেরেন যে যার মতো। তখনও চারদিক মুখরিত বাজির শব্দে।
জলপাইগুড়ি’ গবেষক উমেশ শর্মা বলেন, ’’১৮৬৯ সালে এই জেলার জন্ম। তারপর মূলত পূর্ববঙ্গের লোকেরাই এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁরা সাধারণত বহমান জলে পিতৃ তর্পন করেন। তাই এই জেলায় এসে নদী পারে গিয়েই তর্পন করতেন। সেই সময় এই জেলা ছিল জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। কাক ভোরে নদীপারে তর্পন করতে আসতে গিয়ে যাতে বাঘ, হাতি সহ অন্য বুনো জন্তুদের আক্রমণের মুখে না পড়তে হয়, তাই পথে শব্দ বাজি ফাটাতে ফাটাতে নদীপারে আসতেন তাঁরা। সেই রেওয়াজ রয়ে গেছে আজও।’’
কিন্তু যখন মানুষ নিজের প্রয়োজনে এই শব্দ বাজি ফাটানোর প্রচলন করেছিল, তখন এই সব এলাকার বেশিরভাগ অংশই ছিলো জঙ্গল ও চা বাগান। বসতি ছিল কম। যারফলে বাজির আওয়াজে দূষণের সমস্যা প্রকট ছিল না ততটা। ধীরে ধীরে জেলায় বাড়তে থাকে মানুষের চাপ। বাড়তি মানুষের বাসস্থান ও রুজি রুটির প্রয়োজনে শুরু হয় জঙ্গল সাফ করা। দূষণের নাগপাশে এখন গোটা শহর। তাই শুরু হয়েছে নতুন চিন্তাভাবনা। আদালতের নির্দেশে ৬৫ ডেসিবেল এর উপর যে কোনও শব্দবাজির উপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
এই অকাল দীপাবলির আগে তাই এখন ব্যস্ততা বেড়েছে প্রশাসনের। প্রায় প্রতিদিনই শহরের নানা প্রান্ত থেকে শব্দবাজি আটক করছে পুলিশ। কয়েক দিন আগে জলপাইগুড়ির পাইকারি থেকে খুচরো সমস্ত ব্যবসায়ী সংগঠনকে নিয়ে থানায় মিটিং এ বসেন কোতোয়ালি থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার। মিটিং ডেকে সবাইকে অনুরোধ করার পাশাপাশি আইন ভাঙলে কি সাজা হতে পারে তাও শুনিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরফলে নড়েচড়ে বসেছে ব্যবসায়ীরাও।
তাই প্রথা না সময়ের দাবি, জিতবে কে মহালয়ার ভোরে তারই পরীক্ষা।
Be the first to comment