রীনা নন্দী,
এই পৃথিবীতে যে তার জন্য তেমন কিছু ঘটবে না সেটা জানে শীলা । ঘাসেদের মতই নগণ্য প্রাণ তার । জীবনটা বেফালতু ! মাঠ কে মাঠ ঘাসেদের যেমন কত কারণেই মুচড়ে ছিঁড়ে, রগড়ে মাটিতে মিশিয়ে ফেলা হয় তাকেও, তেমন করা যায় । ভাগ্যদেবতাও বুঝি সেটা বুঝে তাই-ই করলো ।
অথচ সবুজ ঘাসগুলোই আদিগন্ত মখমল করে রাখে । শীলা ভাবে, সেও কি তার পৃথিবীটাকে ভালবাসা দিয়ে সবুজ করে রাখতে চায়নি ! তাই কি সেও সকলের কাছে ঘাসের মতই তুচ্ছ হয়ে গেল ! এতদিন পরেও তার চোখ ভিজে আসে ।
একদিন ঘাসের মত সবুজ মন নিয়েই সে গেছিলো অশোকের কাছে–’ অশোক, অশোক তোমার কাছে পাখির মত থাকবো । এই আকাশের বুক চিরে উড়ছি, উড়ছি, উড়ছি শুধু । প্রান্তর জুড়ে হরিণের মত ছুটছি যেন । কিংবা হাঁসের মত পুকুর পাড়ে ছোটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে আবার ফিরে আসবো তোমার কাছে । তুমি তো হাত বাড়িয়েই রেখেছো আমার দিকে । শান্ত, স্নিগ্ধতায় তাকিয়ে দেখছো আমাকে । আমার হুটোপুটি, অস্থিরতা, ছেলেমানুষি হাসি, কান্না, আনন্দ সব । চোখ দিয়ে শুষে নিচ্ছো সবটুকু । আমি যেন মেঘের মত তোমাকে ঘিরে ঘুড়ছি । যেন কোনদিন বৃষ্টির মত ঝরে পড়ে মাটির বুকে লীন হয়ে যাব না এমনই নিশ্চিন্ত । ‘–সেই অশোক আজ কত দূরের মানুষ ! কত যোজন দূর !
আজ আমি এই এতদূরে হাসপাতালের বেডে বসে ঠিক তুচ্ছ ঘাসেদের মতই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় । কখনও কখনও মনে হয়, অশোক তোমাদের এই কঠিন পার্থিব জগতে আমি ছিলামই না কোনদিন । আমি বোধহয় তোমার কল্পনায় ছিলাম । সেখানেই বাস করতাম । সেই কল্পনা থেকেই জন্ম নিয়ে আজ শীলা মরে যাচ্ছে সকলের অলক্ষে ।
এই দূর্গের মত হাসপাতালটায় তোমার শীলা কয়েদ হয়ে গেছে অশোক ।
Be the first to comment