ফের ভাঙন বাম শিবিরে। পুরুলিয়া কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ নরহরি মাহাতো যোগ দিচ্ছেন বিজেপি’তে।
পুরুলিয়ার এই বাম নেতা বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা বিজেপি রাজ্য দফতরে বৈঠক করেন মুকুল রায়ের সঙ্গে। মাস খানেক আগেই কোচবিহারের ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারী যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। এ বার বাম শিবিরে ভাঙন ধরাল গেরুয়াবাহিনী। পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়ায় এমনিতেই ভাল ফল করেছে বিজেপি, তার পর নরহরির বিজেপি-তে সামিল হওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বইকি।
২০০৯ সালে প্রবল বাম বিরোধী হাওয়ার মধ্যে কংগ্রেস প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোকে পরাস্ত করে পুরুলিয়া লোকসভায় জিতেছিলেন নরহরি মাহাতো। প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি।
এব্যাপারে ফরওয়ার্ড ব্লক রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য দফতর আর বিজেপি রাজ্য দফতরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। তবে ঠিকানা বদলালেন একদা দাপুটে এই নেতা। হেমন্ত বসু ভবন থেকে তিনি এখন কেশব ভবনের পথে।
মুকুলবাবু আগেই বলেছিলেন, “ওরা (তৃণমূল) যাদের দলে নিচ্ছে তাঁদের সঙ্গে জনতা নেই।” বাম শিবিরের একাংশের মতে নরহরি মাহাতো দীর্ঘদিনের রাজনীতিক। হাতের তালুর মতো চেনেন গোটা পুরুলিয়া জেলা। এমনকী বাম জমানায় সিপিএম নেতারাও সমঝে চলতেন তাঁকে। তাই তাঁকে দলে নিলে পুরুলিয়ার সংগঠনের চেহারা বদলাবে বলেও মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।
পুরুলিয়া এখন বিজেপি-র “প্রায়োরিটির জেলা।” পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর ত্রিলোচন মাহাতো-সহ দুই বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। সভা করতে এসেছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও। ফলে সেই জেলার সংগঠনে পটু বাম নেতাকে দলে নিয়ে কেবিজেপি মাস্টার স্ট্রোক দিল বলেই মত পর্যবেক্ষদের একাংশ।
সংশয়াতীত ভাবে গোটা অপারেশনের নেপথ্যে রয়েছেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক মুকুল রায়। অতীতে তৃণমূলের সেকেন্ড ম্যান হিসাবে আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকের বহু নেতার সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে যোগাযোগ রাখতেন মুকুলবাবু। প্রয়োজনে তাঁদের রাজ্যসভা নির্বাচনের সময় ভোটাভুটিতে কাজেও লাগিয়েছেন। বাংলায় বামফ্রন্ট দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর মুকুলবাবু নতুন করে এই নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। মূল উদ্দেশ্য তাঁদের বিজেপি-তে সামিল করানো।
এমনিতে বাম শিবিরের নিচুতলার কর্মী সমর্থকদের সমর্থন ইতিমধ্যে বিজেপি-র অনুকূলে যেতে শুরু করেছে। নরহরি মাহাতোর মতো নেতাদের বিজেপি-তে সামিল করিয়ে সেই প্রক্রিয়ায় ত্বরাণ্বিত করতে চাইছেন মুকুল রায়-কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা।
মুকুলবাবু এ দিন বলেন, “নরহরি মাহাতো-র বিজেপি-তে সামিল হওয়া কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, কংগ্রেস এবং সর্বোপরি তৃণমূল থেকে বহু নেতা কর্মী বিজেপি-তে সামিল হতে চাইছেন। কেননা বাংলায় তৃণমূল সরকারের পতন ঘটানোর জন্য মানুষের মধ্যে চোরাস্রোত বইছে। আগামী দিনে সেই স্রোত সুনামির আকার নেবে।”
Be the first to comment