ফের উত্তপ্ত বীরভূম। এ বার শাসক দলের নেতাকে গুলি করে খুনের চেষ্টা হলো অনুব্রত মণ্ডলের জেলায়। রবিবার দুপুরে মোটর সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন খয়রাশোলের ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ। সেই সময়ই একদল দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। গুলি লাগে তাঁর পেটে। মোটর সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গেলে মারা হয় ধারালো অস্ত্রের কোপ। রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে নিয়ে যান নাকড়াকোন্দা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে নিয়ে আসা হয় দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ এই নেতার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর বীরভূমের জেলা পরিষদ গঠনের সভা থেকে বিরোধীদের উদ্দেশে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন কেষ্ট মণ্ডল। কর্মীদের সমঝে দিয়েছিলেন, পুজোর পরেই মাঠে নামতে হবে। ‘আচট জমিতে পাচন’ দেওয়ার দাওয়াই-ও দিয়েছিলেন অনুব্রত। কিন্তু পুজো মিটতেই খয়রাশোলের ব্লক সভাপতির উপর এই হামলা শাসক দলের কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বীরভূমের এই অঞ্চলে বেআইনি কয়লা খাদান কাঁচা পয়সার খনি। যা গিয়ে মিশছে একেবারে আসানসোলের কোলিয়ারি অঞ্চলে। অনেকের মতে, সেই পয়সার ভাগ নিয়ে শাসদলের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন কোনও ঘটনা নয়। ২০১৩ এবং ২০১৪, পরপর দু’বছরে তৃণমূলের দুই দাপুটে নেতা খুন হয়েছিলেন খয়রাশোলে। প্রথমে খুন হন, দীপক ঘোষের দাদা অশোক ঘোষ এবং ২০১৪ সালে খুন হন তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত অশোক মুখোপাধ্যায়। জেলা বিজেপি-র সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় অভিযোগ করেছেন, বেআইনি কয়লার হিস্সা নিয়েই শাসক দলের ভিতরকার দ্বন্দ্বে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পুজোর আগেই গত ৫ অক্টোবর দলের কোর কমিটির বর্ধিত বৈঠক করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না বলে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন দলের নেতাদের। সামনেই উনিশের ভোট। তৃণমূলের টার্গেট ৪২-এ ৪২। নেত্রী ভাল মতোই জানেন, এই সময় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মানেই সেই এলাকায় অ্যাডভান্টেজ নিয়ে নেবে বিজেপি। এর আগেও একাধিক সভায় মমতা দলীয় নেতাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘বালি খাদান আর কয়লা খাদানের পয়সা খেতে হলে তৃণমূল করতে হবে না।” এখন দেখার দীপক ঘোষের উপর হামলার পর বীরভূমের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয়।
বছর খানেক আগেও দীপক ঘোষের উপর হামলা হয়েছিল। সে বার তাঁর চোয়ালে গুলি লাগে। কোনও রকমে প্রাণে বাঁচেন সে বার। দীপক ঘোষের উপর হামলার ঘটনায় শাসক দল অভিযোগ তুলেছে বিজেপি-র দিকে। দীপক ঘোষকে তাঁর ‘ডান হাত’ আখ্যা দিয়ে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “দীপক ভাল সংগঠক। তাই ওকে বারবার টার্গেট করা হচ্ছে। আমরা ছাড়ব না।” যদিও বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গেরুয়া শিবিরের দাবি, এই হামলা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল।
প্রসঙ্গত, এই খয়রাশোলেই মাস দুয়েক আগে শাসক দলের পার্টি অফিস বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল। সে বারও চাপান উতোর হয়েছিল দুই শিবিরে। শাসক দলের দাবি ছিল বিজেপি বোমা মেরেছে। আর বিজেপি বলেছিল বীরভূমে কোথায় কত বোমা-বন্দুক আছে সব অনুব্রত মণ্ডল জানেন।
Be the first to comment