দু’দিন পেরিয়েছে অমৃতসরের ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পরে। মৃত্যুমিছিল আপাতত থেমেছে ৬১-তে। ইতিমধ্যেই ঘটনার দায় ঝেড়ে ফেলেছে রেল মন্ত্রক। ঘাতক ট্রেনের চালক জানিয়েছেন, লোকজন পাথর ছুড়ছিল বলে তিনি ট্রেন থামাননি। আর এ সবের মাঝে, স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ তুঙ্গে। তাঁদের দাবি, মিথ্যে বলছেন চালক।
রবিবার প্রায় দিনভর অবরোধ চলে রেললাইনে। পুলিশ সরাতে এলে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। ট্রেনচালক ও অনুষ্ঠানের আয়োজকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবি করেন প্রতিবাদীরা। সেই সঙ্গে সরকারি ক্ষতিপূরণও দাবি করেন।
স্থানীয় কাউন্সিলর শৈলেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, রেল চালক মিথ্যে বলছেন। থামানোর চেষ্টা দূরের কথা, ট্রেনের গতি পর্যন্ত কমেনি এতটুকু। “মনে হচ্ছিল, ট্রেন দু’টো যেন মানুষগুলোকে চাপা দেবে বলেই ছুটছিল। কয়েক সেকেন্ডে বেরিয়ে যায় ট্রেনটি, ওইটুকু সময়ে, ওই বিপর্যয়ে পাথর ছোড়া আদৌ সম্ভব! চালক মিথ্যে বলছেন”– বলেন শৈলেন্দ্র।
উল্টো দিকে চালক দাবি করেছেন, “আমি অনেক বার হুইসেল বাজিয়েছি। কেউ সরেনি। শেষ মুহূর্তে এমার্জেন্সি ব্রেকও মারতে গেছিলাম। কিন্তু তখনই প্রচুর পাথর ছুড়তে শুরু করেন রেললাইনের লোকজন। আমার ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তখন আর ব্রেক মারিনি আমি। অমৃতসর পৌঁছে সবটা জানিয়েছি দফতরে।”
ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী পরমজিৎ সিংহের পাল্টা দাবি, “ঘটনার কয়েকশো ভিডিও রয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে কেমন ঝড়ের বেগে ট্রেনটা সবাইকে চাপা দিয়ে বেরিয়ে গেল। চোখের পলকে। খুবই বেশি গতি ছিল ট্রেনটার। আমরা পাথর ছোড়া দূরের কথা, কিছুমাত্র করার সুযোগটুকু পাইনি। আর সমবেত আর্তনাদে ট্রেনের হুইসেলও চাপা পড়ে গিয়েছিল।”
রেল দফতরের তরফে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানানো হয়েছে, ওই ডিএমইউ ট্রেনটির সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে। সে জায়গায়, দুর্ঘটনার সময়ে ট্রেনটি ছিল ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার বেগে। তাই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে জোরে ট্রেন চালানোর অভিযোগ খাটছে না।
তবে ঘাতক ট্রেনের চালকের দাবি নস্যাৎ করেছে পুলিশও। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, না ট্রেনটি গতি কমিয়েছিল, না কোনও পাথর ছোড়া হয়েছিল। স্থানীয় থানার এক কর্তা সুখমিন্দর সিংহের কথায়, “আমি যতটা দেখেছি, তাতে কেউই কোনও পাথর ছোড়েননি। ছোড়ার অবকাশও ছিল না, ট্রেনটি প্রচণ্ড গতিতে বেরিয়ে যায়। একটুও কমেনি গতি।”
ইতিমধ্যেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন ওই রাবণপোড়া অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক সৌরভ মদন মিঠু। ঘরে নেই তার পরিবারও। শনিবার থেকেই তার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পাথর ছুড়ে ভেঙে দিয়েছেন জানলা। বাড়ির চার পাশে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।
বিপর্যয়ের রেশ মেলানোর আগেই যথারীতি শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বিরোধী অকালি দল দায়ী করছে শাসক দলের নেতাদের। মন্ত্রী নভজ্যোৎ সিং সিধুর ইস্তফাও দাবি করেছে তারা। প্রসঙ্গত, সিধুর স্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
Be the first to comment