মাত্র তিন বছর বয়সেই মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন তার বাবা-মা! ১৯ বছর পরে সেই সিদ্ধান্তে যখন অমত জানাল মেয়ে, তখনই শুরু জটিলতা। যার জেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেন ২২ বছরের তরুণী, সদ্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়া দিব্যা চৌধুরি।
মঙ্গলবার জোধপুরের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেকেই। পারিবারিক সূত্রের খবর, দিব্যার যখন তিন বছর বয়স, তখন পাশের গ্রামের জীভরাজ বলে একটি ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে স্থির করেন দিব্যার বাবা-মা। জীভরাজের পরিবার তাঁদের পারিবারিক বন্ধু। কিন্তু এ বিষয়ে ছোটবেলা থেকে কিছুই জানত না দিব্যা। সমস্যা শুরু হল সে বড় হওয়ার পরে। কুড়ির কোঠা ছুঁতেই জীভরাজের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য কথা উঠল।
দিব্যার অভিযোগ, শুধু কথা ওঠা নয়, জীভরাজের পরিবার রীতিমতো চাপ দিতে থাকে বিয়ের জন্য। দিব্যা রাজি না হওয়ায়, একই চাপ দিতে শুরু করে পঞ্চায়েতও। পঞ্চায়েত দাবি করল, প্রায় দু’দশক আগে দেওয়া বিয়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই হবে দিব্যাকে। আর তা নাকরলে ১৬ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এই নিয়ে তুমুল মানসিক চাপ দেওয়াও শুরু হয় দিব্যাকে।
শেষমেশ সহ্য করতে না পেরে পুলিশের দ্বারস্থ হন দিব্যা। অভিযোগ দায়ের করেন জীভরাজের পরিবারের বিরুদ্ধে। এতে ফল হয় বিপরীত। পঞ্চায়েত নিদানে দিব্যার জরিমানার অঙ্ক ১৬ লক্ষ থেকে বেড়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হয়। দিব্যাকে বলা হয় অভিযোগ প্রত্যাহার করে জীভরাজের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে। তাঁকে একঘরে করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে জীভরাজের বাড়ি থেকে বাড়ে বিয়ের চাপও ৷
অবশেষে, রবিবার পরবর্তী পঞ্চায়েত মিটিংয়ের আগে ফের থানার দ্বারস্থ হন দিব্যা৷ দ্রুত তদন্ত দাবি করেন তাঁর অভিযোগের। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোনও উপায় না দেখে থানার ভিতরে, পুলিশের সামনেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন দিব্যা।
দিব্যা বলেন, “আমি ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিলাম। ঘর থেকে বেরোতে পারছিলাম না। আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে যেতে বসেছে। পঞ্চায়েত যেভাবে ঢুকে পড়েছে গোটা ঘটনায়, সেখান থেকে কী করে বেরোব ভাবতেও পারছিলাম না। পুলিশও কিছু করছিল না অভিযোগ পেয়েও। তাই আত্মহত্যা ছাড়া পথ ছিল না আর।”
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পঞ্চায়েত প্রধান-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশি গাফিলতি থাকলে সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। তবে পুলিশের পাল্টা দাবি, দিব্যা অভিযোগ দায়েরের পরে বয়ান দিতে রাজি হননি।
Be the first to comment