তিনসুকিয়ার ঢোলা খেরবাড়ি থেকে মিললো অত্যাধুনিক একে-৮১ গুলির খোল। গোয়েন্দাদের দাবি, আলফা সহ উত্তর পূর্ব ভারতের জঙ্গি সংগঠনগুলিই প্রধানত এই একে-৮১ এর মতো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে। চিনে প্রস্তুত এই স্বয়ংক্রিয় রাইফেল একে-৪৭, ও একে-৫৬ এর থেকেও লক্ষ্যভেদে আরও বেশি নির্ভুল। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যায় বলেও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির কাছে এই একে-৮১ এখন অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। ঘটনাস্থল থেকে এই স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলি মেলায়, পাঁচ বাঙালিকে খুনের ঘটনায় আলফা (স্বাধীন) জড়িত বলেই প্রাথমিক অনুমান গোয়েন্দাদের। তবে রমেল অসম নামে এক ব্যক্তি ই-মেল করে সেই দাবি খারিজ করেছেন। এই মেলটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গত দেড় দশকে একাধিকবার বাংলা ও হিন্দিভাষীদের উপর আক্রমণের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে উত্তরপূর্ব ভারতের এই জঙ্গি সংগঠনের। ১৯৯০ সালে অসমের বিখ্যাত ব্যবসায়ী সুরেন্দ্র পালকে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল আলফার বিরুদ্ধে। ১৯৯৭ সালে বিখ্যাত সমাজকর্মী সঞ্জয় ঘোষকে অপহরণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে আলফার বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালে আলফার সেনা দিবসে একটি বাসে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সাত বাঙালি ও হিন্দিভাষীকে হত্যার ক্ষেত্রেও নজরে ছিল আলফার জঙ্গিরা। ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই পুলিশের চর সন্দেহে অসমের গোয়ালপাড়ায় তিনজন বাঙালিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল আলফার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে।
সার্বভৌম অসমের দাবিতে ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল তৈরি হয়েছিল আলফা। গোটা উত্তরপূর্ব ভারতে এই জঙ্গি সংগঠন প্রচুর নাশকতা ঘটিয়েছে। ১৯৯০ সালে সেনাবাহিনী আলফার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। গ্রেফতারের পর অনুপ চেটিয়া, অরবিন্দ রাজখোয়া সহ সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা দীর্ঘদিন জেলে বন্দি ছিলেন। বাংলাদেশের জেলে বন্দি থাকা অনুপ চেটিয়াকে ভারতে এনে আলফাকে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানোর প্রস্তাব দিয়েছিলো কেন্দ্র। ২০১০ সালে আলফার একটি অংশ কেন্দ্রের সাথে আলোচনায় গেলেও পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন অংশ আলফা (স্বাধীন) নাম নিয়ে আগের মতোই সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
চিন-মায়ানমার সীমান্তে পরেশ বড়ুয়ার আস্তানাতেই সশস্ত্র প্রশিক্ষণ জারি বলেও জানতে পারেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি পরেশ বড়ুয়া চিনে রয়েছেন বলেও দাবি করেছেন গোয়েন্দারা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে সার দিয়ে দাঁড় করিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ঢোলা খেরবাড়িতে পাঁচজন বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। নিহতরা হলেন অবিনাশ বিশ্বাস, শ্যামল বিশ্বাস, অনন্ত বিশ্বাস, সুবল দাস ও ধনঞ্জয় নমঃশুদ্র। এমনিতেই এনআরসি ও ডি ভোটার্স নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন অসমের বাঙালিরা। এ বার জঙ্গিরাও তাঁদের টার্গেট করায় সেই আতঙ্ক বেড়ে গেছে আরও।
Be the first to comment