দীপাবলীতে বাঁদনা পরবে মাতলেন জঙ্গলমহলের মানুষ

Spread the love

সারা দেশ যখন মেতে উঠেছে আলোর উৎসব দীপাবলীতে, তখন একেবারেই তাঁদের নিজস্ব উৎসব বাঁদনা পরবে মাতলেন জঙ্গলমহলের মানুষ। বাঁদনা কথাটির অর্থ বন্দনা । আর সেই পরবে পুজো করা হয় গৃহস্থঘরের গোয়ালে থাকা গরু-বলদদের।

এমন সময় এই পরব হয় , যখন আমন ধান পেকে গিয়েছে মাঠে । চলছে ফসল ঘরে তোলার কাজ। তেমন আর কোনও পরিশ্রম নেই গরু-বলদদের।  এই উৎসবের আড়ালে নিহিত রয়েছে এই গৃহপালিত প্রাণীদের পরিচর্যা ও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বার্তা ।

রীতি মেনে উৎসব শুরু হয় অম্যাবসার রাতে। তার আগে সকাল থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। নিকোনো গোয়ালঘর আলপনা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে । গরু- মহিষ – বলদদের স্নান করিয়ে শিঙে তেল মাখিয়ে সিঁদুরের টিপ পরিয়ে , গায়ে আলতার ছোপ দিয়ে সাজানোর পালাও শেষ । গ্রামের ছেলে বুড়োরা রাতে গানের দল বার করবেন । সেই দলকে বলা হয় ঝাগোড়দল । প্রতি বাড়ির গোয়াল ঘরের সামনে গিয়ে সেই দলের সদস্যরা গরু মহিষদের গান শোনাবেন । সেই গানকে বলা হয় জাগরণী গান । প্রতিপদের সকালে নিয়ম মেনে হয় গোয়াল পুজো ।

লাঙল , জোয়াল ইত্যাদি কৃষি কাজের উপকরণ গুলিকে ধুয়ে রাখা হয় তুলসি তলায় । গোয়াল ঘর পরিষ্কার করে সেখানে বাড়ির মালিক স্নান করে নতুন বস্ত্র পরে গোয়াল পূজা করেন । ব্যাঘ্র দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য গোয়ালে মুরগি বলিও দেওয়া হয় । প্রচলিত বিশ্বাস, এর ফলে গোয়ালের গরু মহিষরা নিরাপদে থাকে ।

ঘরে ঘরে ভাপা পিঠে আর ভাজা পিঠের গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস । বদনা পরবের শেষ পর্যায় অনুষ্ঠিত হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন । এই দিন বিকেলে গ্রামের মাঠে শাল বল্লিতে বলদদের বাঁধা হয় । তারপর মৃত মহিষের চামড়া নাচাতে থাকেন একজন । ওই শুকনো চামড়ার গন্ধে বলদটি গোঁতাতে যায় । তখন বেজে ওঠে ঢাক, মাদল, ঢোল, খোল করতাল ।

ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট লোক সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন , বাঁদনা পরব আসলে গরু -মহিষ- বলদ কে বন্দনা করার রীতি । সারা বছর গরু -বলদ আমাদের দুধ দিয়ে , গোবর দিয়ে , চাষের কাজে সাহায্য করে । সেই সব গৃহপালিত প্রাণীকে শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশেই কয়েকশো বছর ধরেই এই উৎসব চলে আসছে জঙ্গলমহলে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*