নীলাঞ্জনা রায়ের সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে মজে গোটা দেশ; পড়ুন!

Spread the love
তার বয়সের পাঁচজন যখন পড়াশোনা, বন্ধু, খেলাধুলো, বেড়াতে যাওয়া, এ সব নিয়ে বেজায় ব্যস্ত, তখন ছোট্ট মেয়েটার পৃথিবীতে ছিল শুধুই সুর-তাল আর ছন্দ। এর বাইরে আর কিছুর দিকে তাকিয়ে দেখারই যেন ফুরসত মিলতো না। স্কুলে যেতে হয়, তাই যাওয়া। পড়াশোনা করতে হয়, তাই করা। কিন্তু ধ্যান জ্ঞান শুধুই গান। তপস্যার ফল ফলতে শুরু করল অচিরেই। জি বাংলার সারেগামায় (জুনিয়র) গান গেয়ে প্রথম নজর কাড়া। পরের ধাপ ভয়েজ ইন্ডিয়া কিডস। আর তারপরেই জনপ্রিয় ইন্ডিয়ান আইডল।
সে দিনের সেই ছোট্ট মেয়েটা এখন চোদ্দোর কিশোরী। যত এগোচ্ছে ইন্ডিয়ান আইডল, ততই মাটি শক্ত হচ্ছে নীলাঞ্জনা রায়ের। সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চ মাতিয়ে দিয়ে গোটা দেশের নজর কেড়েছে এই কিশোরী। তাই স্বাভাবিকভাবে সে এখন যেন গোটা জেলার আইকন। তার স্বপ্নের উড়ানে আন্তরিকভাবেই সামিল থাকতে চান আলিপুরদুয়ারের প্রতিটি বাসিন্দা। তৈরি হয়েছে নীলাঞ্জনা ফ্যান ক্লাবও।
আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া মাঝেরডাবরির বাসিন্দা নীলাঞ্জনা। স্থানীয় নেতাজী বিদ্যাপীঠের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা মা দুজনেই পেশায় শিক্ষক। নীলাঞ্জনার বাবা সুভাষ রায় জানান,  যখন কিছুই বুঝতো না তখন থেকেই গলার সুরে নজর কাড়তো। তাই খুব ছোটতেই গান শেখার জন্য ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকেই গানটাকেই আঁকড়ে ধরে তাঁদের মেয়ে। শহরের বিশিষ্ট সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ পরেশ চক্রবর্তীর কাছে নীলাঞ্জনার হাতেখড়ি। এখন পরেশ চক্রবর্তীর পুত্রবধূ দেবত্রী কুণ্ডু চক্রবর্তীর ছাত্রী নীলাঞ্জনা। সুভাষবাবু বলেন,  “মেয়ে যখন ইন্ডিয়ান আইডলে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল তখন থেকেই জানতাম অনেককে পিছনে ফেলে দেবে ও। কারণ চেষ্টা আর যোগ্যতা দুটোই রয়েছে।  পাশাপাশি রয়েছে এত মানুষের আশীর্বাদ। সেটাও তো কম কথা নয়।”
রাজ্য থেকে মোট চারজন গানের এই প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে রাজ্য থেকে নীলাঞ্জনাই একমাত্র প্রতিযোগী যে টপ টুয়েলভে রয়েছে। আলিপুরদুয়ারের তবলাবাদক প্রকাশ মণ্ডল বলেন, “ আমি নীলাঞ্জনাকে খুব ছোটবেলা থেকে চিনি। কী দারুণ সুরে খেলে ওর গলা। ও আরও অনেক বড় হবে।”
নীলাঞ্জনার সাফল্যে খুশির ছটা তার স্কুলেও। প্রতিযোগিতার প্ল্যাটফর্মে যত এগিয়ে যাচ্ছে নীলাঞ্জনা, ততই উত্তেজনা বাড়ছে সহপাঠী, বন্ধুদের। পিছিয়ে নেই শিক্ষক শিক্ষিকারাও। দু হাত ভরে তাঁরা আশীর্বাদ করছেন তাঁদের ছাত্রীকে। স্কুলের শিক্ষক অনিমেষ রায় বলেন, “আমাদের স্কুলে ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়েছিল নীলাঞ্জনা। গানের সঙ্গে এতটা জড়িয়ে থাকে বলেই আমরা ওর ক্ষেত্রে বহুবার স্কুলের ক্লাস ও পরীক্ষার ব্যাপারে নিয়ম শিথিল করি। ও আরও এগিয়ে যাক। সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি সবাই।”
এর আগে আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা দীপায়ন রায় ও বন্দনা দত্ত জি বাংলার সারেগামায় গান গেয়ে নজর কেড়েছিল। তাঁদের ঘিরেও উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল এই প্রান্তিক জেলায়। এ বার নীলাঞ্জনা। মঞ্চে যে দিন নীলাঞ্জনার উপস্থিতি, সে দিনই সব কাজ ফেলে টিভির সামনে বসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ছে গোটা আলিপুরদুয়ার।
এই ভালবাসা ছুঁয়ে গেছে কিশোরীকেও। তার কথায়,  “খুব আনন্দ হচ্ছে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*