২০১৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, একদিন ট্রাম্প টাওয়ারের ২৬ তলায় তাঁর অফিসে এসেছিলেন দীর্ঘদিনের বন্ধু ডেভিড পেকার । তিনি ন্যাশনাল এনকোয়ারার নামে এক ট্যাবলয়েডের কর্তা । ট্রাম্প তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার প্রচারে যাতে সুবিধা হয় সেজন্য তুমি কী করতে পার? তিনি কথা দিলেন, যে মেয়েরা তোমার কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস করে দেবে বলে শাসাচ্ছে, তাদের মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করব ।
এমন করে নাকি দুজনের মুখ বন্ধ করেছিলেন ট্রাম্প । একজন প্লে বয় পত্রিকার প্রাক্তন মডেল। অপরজন অ্যাডাল্ট ফিল্মের স্টার । বিখ্যাত ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রথমে ছাপা হয়েছিল, ট্রাম্প অর্থ দিয়ে দুই মহিলার মুখ বন্ধ করেছেন। তাঁরা দাবি করতেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁদের যৌন সম্পর্ক ছিল । কিন্তু অনেক ডলার পেয়ে এখন মুখ বন্ধ রেখেছেন।
ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউসের কর্মীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন এতদিন । কিন্তু এবার আমেরিকার অ্যাটর্নির অফিসও নাকি প্রমাণ পেয়েছে, ট্রাম্প সত্যিই অর্থ দিয়ে দুজনের মুখ বন্ধ করেছিলেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প নাকি ডেভিড পেকারকে ফোন করে বলেন, কারেন ম্যাকডুগাল নামে এক মেয়ে আমার বিরুদ্ধে মুখ খুলবে বলে শাসাচ্ছে । পেকার সঙ্গে সঙ্গে কারেনকে দেড় লক্ষ ডলার দেন । তাতেই মুখ বন্ধ হয় কারেনের ।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল, কখন কীভাবে কারেনকে অত ডলার পৌঁছে দেওয়া হবে, সব জানতেন ট্রাম্প । তাঁর হয়ে মাইকেল কোহেন নামে এক ব্যক্তি নাকি এইসব ব্যাপার দেখাশোনা করতেন। কোহেন ছিলেন ট্রাম্পের কোম্পানির বিশ্বস্ত কর্মী । ২০১৭ সালে সেই চাকরি ছেড়ে প্রেসিডেন্টের অ্যাটর্নি হন।
গত ২৩ অক্টোবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ট্রাম্পকে প্রশ্ন করে, কোহেন কি আপনার নির্বাচনী প্রচারে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন? তিনি এককথায় উড়িয়ে দেন। বলেন, তার ব্যাপারে আমি বিশেষ কিছু জানি না । সে জনসংযোগ দফতরের লোক। আমার ছোটখাটো কিছু কাজ করে দিয়েছিল।
কিন্তু ম্যানহাটনের ফেডারেল প্রসিকিউটার অত সহজে ট্রাম্পকে বিশ্বাস করতে রাজি নন । গত আগস্ট মাসে তিনি কোহেনের বিরুদ্ধে ৮০ পাতার রিপোর্ট তৈরি করেছেন। সেখানে পরোক্ষে ট্রাম্পের কথাও উল্লেখ করা আছে।
প্রেসিডেন্টের পক্ষে সবচেয়ে বিপদের কথা হল, কোহেন নিজেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তিনি একসময় নিজেকে ট্রাম্পের খুব অনুগত বলে দাবি করতেন। এমন কথাও বলেছিলেন, ট্রাম্পের জন্য বুলেটের মুখে দাঁড়াতে রাজি আছেন। এখন তিনিই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নানা তথ্যপ্রমাণ তুলে দিচ্ছেন তদন্তকারীদের হাতে।
কোহেন ফেডারেল প্রসিকিউটারদের জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে ট্রাম্পের সঙ্গে আমার আলোচনা হয় । স্টেফানি ক্লিফোর্ড নামে এক অ্যাডাল্ট ফিল্ম স্টারের মুখ কীভাবে বন্ধ রাখা যায়, সেই নিয়ে কথা হয়েছিল। ট্রাম্প আমাকে বললেন, ব্যাপারটা যে করে পার মিটিয়ে নাও
কোহেনের কথা সত্যি হলে ধরে নিতে হবে নির্বাচনী প্রচার সংক্রান্ত আইন ভেঙেছেন ট্রাম্প। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটরা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ । তারা ঘোষণা করেছে, এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে পুরোদমে । পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিপদ ঘটার সম্ভাবনা আছে ।
Be the first to comment