নিহত প্রখ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক সুজাত বুখারির হত্যাকারী; পড়ুন বিস্তারিত!

Spread the love
ছোটখাটো চেহারা। লম্বা চুল। গালে পাতলা দাড়ি। দেখে বোঝাই যায় না সে লস্কর ই তৈবার কম্যান্ডার নাভিদ জাট। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, শয়তানি বুদ্ধিতে তার জুড়ি মিলত না। ২০১৬ সালে পুলিশ তাকে ধরে ফেলেছিল। জেলে এক রহস্যময় ব্যক্তি তার জন্য আনত চিকেন কারি। রক্ষীদের ধারণা ছিল, সে নভিদের কোনও আত্মীয়।
২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশকে বোকা বানিয়ে সে উধাও হয় জেল হাসপাতাল থেকে। শুধু তাই নয়, পালানোর সময় গুলি করে মারে দুই পুলিশকর্মীকে। তখন পুলিশ বুঝতে পারে, যে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি জেলে চিকেন কারি আনত, তার মাধ্যমেই পালানোর ছক কষেছিল নাভিদ। তাকে মারতে পারা কাশ্মীর উপত্যকায় নিরাপত্তারক্ষীদের বড় সাফল্য বলেই মনে করা হচ্ছে।
লস্করের কম্যান্ডার নভিদ জাটের অপর নাম ছিল আবু হানজুল্লা। ২০১৬ সাল থেকে সে ছিল শ্রীনগরের সেন্ট্রাল জেলে। সেখানেই তার জন্য চিকেন কারি আনত সেই রহস্যময় ব্যক্তি।
২০১৮ সালের শুরুতে নভিদ জেল কর্তৃপক্ষকে জানায়, সে অসুস্থ বোধ করছে। ৩০ জানুয়ারি তাকে শ্রীনগরের শ্রী মহারাজা হরি সিং হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি তার দ্বিতীয়বার হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। সেদিন মোট ছজন বন্দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যেককে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছিল। বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ তারা হাসপাতালে পৌঁছায়। যে গাড়িতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা দাঁড় করানো হয় পার্কিং লটে।
গাড়ি থেকে যখন বন্দিদের নামানো হচ্ছিল, তখন নভিদ বলে সে অসুস্থ বোধ করছে। এখন গাড়ি থেকে নামতে পারবে না। তখন বাকি পাঁচ বন্দিকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যান রক্ষীরা। নভিদকে পাহারা দেওয়ার জন্য রয়ে যান দুই পুলিশকর্মী।
পাঁচ বন্দি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই নভিদ বলে, আমি ভালো হয়ে গিয়েছি। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চলুন। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গাড়ি থেকে নেমে নভিদ কারও দিকে চেয়ে দেখল। হিলাল আহমেদ রাদার নামে এক ব্যক্তি তাকে দুই আঙুল দিয়ে ‘ভি’ সাইন দেখাল।
পুলিশের ধারণা, দুই আঙুল দেখিয়ে হিলাল বোঝাতে চেয়েছিল, মাত্র দু’জন পুলিশ আছে। তারপর সে পিস্তল বার করে দুই পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালায়। হেড কনস্টেবল মুস্তাক দার এবং কনস্টেবল বাবর খানের গুলি লাগে।
নভিদও তখন এক আহত পুলিশকর্মীর হাত থেকে কার্বাইন ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু সেই পুলিশকর্মী গুরুতর আহত অবস্থাতেও তাকে গুলি করেন। নভিদের পায়ে গুলি লাগে।
গুলি লাগার পরে সে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। বাইরে একটি সাদা মারুতি গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। তার ভিতরে ছিল তিন ব্যক্তি। নভিদ ওঠে সেই গাড়িতে। অন্যদিকে হিলাল হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ওঠে একটি মোটর বাইকে। প্রায় ২৫ মিনিট ধরে তারা যায় একটি অতি সুরক্ষিত রাস্তার ওপর দিয়ে। সেই রাস্তার ধারে ছিল সিআরপি ক্যাম্পে, শহিদ গুঞ্জ থানা, সচিবালয়ের পুরানো অফিস, জাহাঙ্গির চৌক, লাল চৌক এবং দূরদর্শন ভবন।
পালিয়ে সে আশ্রয় নেয় দক্ষিণ কাশ্মীরে। এর পরে কয়েকজন হিজবুল কম্যান্ডারের সঙ্গে তার ছবি দেখা যায়। পুলিশ বুঝতে পারে, লস্করের সঙ্গে অপর জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। হিজবুলই দক্ষিণ কাশ্মীরে নভিদকে আশ্রয় দিয়েছে।
অবশেষে বুধবার বদগাঁওয়ে নিহত হল নাভিদ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*