আড়াই বছর আগে হঠাৎ করেই অন্ধকার নেমে এসেছিল শোভা সাজ্জুর জীবনে। তাঁর স্বামীর অফিসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ঘুরছিল এক মহিলার নগ্ন ভিডিও। স্বামীর সহকর্মী, যিনি ওই ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন, দাবি করেছিলেন এই ভিডিও শোভার। সেই থেকেই শুরু এই লড়াই।
আজও সেই দিনটা ভুলতে পারেননি শোভা। তাঁর কথায়, ” ভিডিওটা আমার স্বামী দেখার পর আমাকে দেখায়। আমি দেখি আমার মতো দেখতে এক মহিলা ক্যামেরার সামনে পোশাক বদল করছে। আমি স্বামীকে বলেছিলাম, এটা আমি নই।” কেরলের কোচির বাসিন্দা শোভা এই ভিডিও দেখার পরে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলে দক্ষিণ এর্ণাকুলাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
তাঁর স্বামীর অফিসের সহকর্মী লিট্টো, যিনি এই ভিডিও দিয়েছিলেন তাঁকে আটক করে পুলিশ। কোথা থেকে এই ভিডিও তিনি পেয়েছেন, তার কোনও উত্তর দিতে পারেনি লিট্টো। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারও ভিডিও দেখে বলেছিলেন ওই মহিলা শোভা নন। তারপরেও শোভার জন্য বাকি ছিল সবথেকে বড় চমক। তাঁর স্বামী সাজ্জু থানায় গিয়ে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ওই মহিলা শোভা। আর এই অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিবাহবিচ্ছেদের মামলাও করেন সাজ্জু।
একদিকে এই বদনাম, অন্যদিকে স্বামীর করা বিবাহবিচ্ছেদের মামলা, এই দুই চাপে প্রথমে ভেঙে পড়েছিলেন শোভা। আদালত তাঁকে জানায়, প্রত্যেক মাসের দ্বিতীয় শনিবার তিনি তাঁর তিন সন্তানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাবেন। কিন্তু মাসখানেক পরেই তাঁর স্বামী আদালতে অভিযোগ করেন, তিনি তাঁর সন্তানদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। এরপরে তাঁর দেখা করার অনুমতিও কেড়ে নেওয়া হয়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই।
শোভার কথায়, ” পুলিশ বলার পরেও আমার স্বামী আমাকে বিশ্বাস করেনি। এমনকী আমার সন্তানদের মনেও আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা ঢোকানো হচ্ছিল। তাই আমি ঠিক করি আমি যে নির্দোষ, সেটা সবার সামনে প্রমাণ করতে হবে।” তিনি আবার পুলিশের কাছে যান। পুলিশ সেই ভিডিও ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠায়। প্রথম ফরেন্সিক রিপোর্টে বলা হয়, ভিডিওতে মহিলা তিনি নয়, এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না।
কিন্তু নিজের লড়াই থামাননি শোভা। তিনি সত্যিটা জানতেন। সেটাই সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তার জন্য বারবার পুলিশের কাছে গিয়েছেন। শোভার বক্তব্য, ” এলাকার এমন কোনও পুলিশ স্টেশন ছিল না, যেখানে আমি যাইনি। আমাকে দেখে পুলিশরা বিরক্ত হয়ে যেত। কিন্তু আমি যাওয়া থামাইনি। কারণ আমি চেয়েছিলাম সত্যিটা সবাই জানুক।”
তারপরে ঘটে এক মিরাকল। ডিজিপি লোকনাথ বেহরার সঙ্গে দেখা করেন শোভা। তিনিই ওই ভিডিও ফুটেজ দেশের সবথেকে বড় সাইবার রিসার্চ সেন্টার C-DAC-তে পাঠান। সিবিআইয়ের কোনও তদন্ত হলেও তাঁরা এই সংস্থার সাহায্য নেন। এই সংস্থা পরীক্ষা করে জানায়, ভিডিও’র ওই মহিলা কোনওমতেই শোভা নন। এমনকী এ কথা লিখিতভাবেও জানানো হয়েছে তাঁকে। অবশেষে একটা লড়াই শেষ হয়েছে তাঁর।
শোভার বক্তব্য, ” অন্তত এরপর আর আমার সন্তানদের শুনতে হবে না আমি খারাপ। তবে স্বামীকে এই কথা আমি জানাবো না। যখন জানার ও জেনে যাবে।” তাহলে কী সব লড়াই শেষ? উত্তরে শোভা বলেন, সবে একটা লড়াই শেষ হলো। এবার সন্তানদের কাস্টডি নেওয়ার জন্য লড়াই শুরু করবেন কেরলের এই আয়রন লেডি।
Be the first to comment