সন্দেহের বাইরে থাকল না মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগড়ের নির্বাচন। বিরোধীরা আগেই অভিযোগ করেছিল ইভিএম মেশিন নিয়ে কারচুপি করতে পারে শাসক দল। নির্বাচনের পর কমিশনের বক্তব্যে আরও জোরালো হলো সেই অভিযোগ।
ঘটনার সূত্রপাত ২৮ নভেম্বর নির্বাচন পর্ব মিটে যাওয়ার পরেই। শনিবার সকালে একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিজেদের প্রতিনিধি দল পাঠায় কংগ্রেস। এই দলের তরফে অভিযোগ করা হয়, নির্বাচন মিটে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর একটি নম্বরপ্লেটহীন স্কুলবাস অব্যবহৃত ইভিএম মেশিন এনে জমা দেয় সাগরের কালেক্টর অফিসে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে এই অব্যবহৃত ইভিএম জমা দেওয়ার কথা। এ ছাড়াও তাঁদের অভিযোগ, মধ্যপ্রদেশে যে স্ট্রংরুমে ইভিএম মেশিনগুলিকে রাখা হয়েছে, সেখানে এক ঘণ্টার উপর কারেন্ট ছিল না। ফলে ঘরগুলির সিসিটিভি কাজ করেনি। এই সময় যে কেউ মেশিনের সঙ্গে কারচুপি করতে পারে, এই মর্মে অভিযোগ জানায় কংগ্রেস।
শনিবার কংগ্রেসের এই অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। নির্বাচন কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ” ভোপালের কালেক্টর অফিসের তরফে রিপোর্টে জানানো হয়েছে, কারেন্ট না থাকায় শনিবার সকাল ৮টা ১৯ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ইভিএম রাখা স্ট্রংরুমের সিসিটিভি ক্যামেরা ও এলইডি ডিসপ্লে কাজ করেনি। তাই জন্য এই সময়ের রেকর্ডিং করাও সম্ভব হয়নি। তারপর অতিরিক্ত এলইডি, ইনভার্টার ও জেনারেটরের ব্যবস্থা করে ইলেক্ট্রিসিটি ঠিক করা হয়।” এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ” স্ট্রংরুমের বাইরে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিকঠাক কাজ করছে। দ্বিস্তরীয় সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়েছে স্ট্রংরুমের বাইরে। এই নিরাপত্তাকর্মীরা সবকিছুর দেখভাল করছেন। ইভিএম মেশিন একদম সুরক্ষিত আছে। ” এর আগে কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ আনা হয়েছিল, ভোপালের পুরনো জেল স্ট্রংরুমের দরজার তালা খোলা ছিল। কংগ্রেসের অভিযোগের পর সেই তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনের তরফে বিবৃতি দিয়ে ইভিএম সুরক্ষিত থাকার কথা বলা হলেও অব্যবহৃত ইভিএম মেশিন দেরিতে জমা দেওয়ার ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, এটা দায়ত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয়। তাই এই ঘটনায় অভিযুক্ত তহসিলদার রাজেশ মেহেরাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, অব্যবহৃত ইভিএম মেশিন ও নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিনগুলিকে আলাদা আলাদা স্ট্রংরুমে রাখা হয়েছে।
কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল মধ্যপ্রদেশ ছাড়াও আঙুল তুলেছে ছত্তীসগড়ের দিকে। তাঁদের অভিযোগ, ছত্তীসগড়ের ধামতারি কেন্দ্রের ইভিএম যে স্ট্রংরুমে রাখা হয়েছে, তার বাইরে মোবাইল ও ল্যাপটপ হাতে সন্দেহভাজনদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। সিসিটিভি সারানোর নাম করে গিয়ে ইভিএম মেশিনের সঙ্গে কারচুপি করা হয়ে থাকতে পারে বলে দাবি কংগ্রেসের।
নির্বাচন কমিশনের আশ্বাসবার্তার পরেও সন্দেহ যাচ্ছে না বিরোধীদের। বিজেপি’র বিরুদ্ধে ইভিএম মেশিনে কারচুপির অভিযোগ এই নতুন নয়। এই অভিযোগ আগেই এনেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৬ নভেম্বর নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে দলের সাধারণ পরিষদের বর্ধিত বৈঠকে এই ব্যাপারে সতর্ক করে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, ৬০ শতাংশ ইভিএম মেশিনে কারচুপি করবে বিজেপি। তাই নির্বাচনের আগে ভালো করে মেশিন চেক করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, তার জন্য দরকার হলে ৩ জনের জায়গায় ৬ জন লোক যাবেন। কিন্তু সবকিছু দেখেশুনে নেবেন।
উনিশের ট্রেলর হিসেবেই দেখা হচ্ছে ভারতের পাঁচ রাজ্যের ভোটকে। তার মধ্যে প্রথমে ভোট হয়েছে মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগড়ে। কিন্তু ভোটের পরেই কংগ্রেসের অভিযোগকে যেভাবে মেনে নিয়ে বিবৃতি দিল নির্বাচন কমিশন তাতে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
Be the first to comment