নিজের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরতে গ্রামের অন্য কৃষকদের সঙ্গে ‘কিষাণ মুক্তি মোর্চার’ মিছিলে যোগ দিতে দিল্লি এসেছিলেন বছর ৫২’র কিরণ সান্তাপা। ছিলেন পাহাড়গঞ্জের আম্বেদকর ভবনে। পরের দিন সেই ভবনের নীচেই তাঁর রক্তাক্ত দেহ পাওয়া গেল।
পুলিশ সূত্রে খবর, মহারাষ্ট্রের কোলাপুর জেলার বাসিন্দা কিরণ গ্রামের আরও কিছু কৃষকের সঙ্গে মিছিল করে দিল্লি আসেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা দিল্লি এসে পৌঁছান। শুক্রবার কিষাণ মুক্তি মোর্চার মিছিলেও যোগ দেন তাঁরা। পরের দিন ফেরার কথা ছিল। রাতটুকু থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল পাহাড়গঞ্জ এলাকার আম্বেদকর ভবনে। সেখান থেকেই শুক্রবার ভোর রাত ৩ টে ১৫ নাগাদ পুলিশের কাছে ফোন যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে ভবনের একতলায় পড়ে রয়েছেন কিরণ। চারদিক ভেসে যাচ্ছে রক্তে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে লেডি হার্ডিং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আম্বেদকর ভবনে আশ্রয় নেওয়া অন্য কৃষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা সকাল ঘুম থেকে ওঠার পরেই পুরো ঘটনা জানতে পারেন। রাতে কিছুই বুঝতে পারেননি তাঁরা। তাঁরা জানিয়েছেন, নিজের গ্রামের অন্য কৃষকদের কিরণ দিল্লি এসেছিলেন। চার তলার ২৯ নম্বর ঘরে থাকছিলেন তাঁরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান ওই চারতলার করিডর থেকেই নীচে পড়ে মৃত্যু হয়েছে কিরণের।
কিরণের গ্রামের অন্য এক কৃষক মহাবীর গিনাপাচোগুলে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাত ২ টো নাগাদ তাঁরা দিল্লি পৌছান। রাতটুকু বাঙ্গালা সাহিব গুরুদ্বারে কাটিয়ে সকালে রামলীলা ময়দানে অন্য কৃষকদের সঙ্গে ‘কিষাণ মুক্তি মোর্চায়’ যোগ দেন। মিছিল করে পার্লামেন্ট স্ট্রিটের দিকে অভিযান করেন তাঁরা। পরের দিন অর্থাৎ শনিবার রাত ৮ টায় তাঁদের ফেরার কথা ছিল। শুক্রবার রাতে পাহাড়গঞ্জের আম্বেদকর ভবনে থাকার ব্যবস্থা ছিল তাঁদের। রাত ১১ টা নাগাদ ঘুমাতে যান তাঁরা। তারপর সকালে উঠে এই ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী থাকলেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, গ্রামে কিরণের বাবা-মা, স্ত্রী ও এক ছেলে আছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে এম.টেক পাস করার পরেও বাবার সঙ্গে জমিতে সাহায্য করে। মহাবীর জানিয়েছেন, মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে বেশ কিছু টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল কিরণের। তাই চারতলা থেকে কিরণ পড়ে গিয়েছেন, না আত্মহত্যা করেছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে পুলিশ জানিয়েছে অন্যমনস্ক ভাবে চারতলা থেকে পড়েই মৃত্যু হয়েছে কিরণের। তাঁর দেহ দুই আত্মীয়ের সঙ্গে তাঁর গ্রামে পাঠানো হয়েছে।
Be the first to comment