রজত দে-কে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার স্ত্রী অনিন্দিতার পুলিশি হেফাজত। অনিন্দিতাকে ৮ দিনের পুলিশ হেফজাতের নির্দেশ দিল বারাসাত আদালত। শনিবার রাতেই অনিন্দিতা পালকে গ্রেফতার করে নিউটাউন থানার পুলিশ।
টানা জেরার মুখে ভেঙে পড়েছিলেন অনিন্দিতা।শনিবার রাতেই অনিন্দিতার স্বীকারোক্তি, “আমিই রজতকে খুন করেছি, আত্মহত্যা নয়, শ্বাসরোধ করেই মারা হয়েছে রজতকে।” আইনজীবীর স্ত্রীর এই স্বীকারোক্তির পরই তাঁকে গ্রেফতার করে নিউটাউন থানার পুলিশ। শনিবার গভীর রাতে জেরা চলাকালীন অনিন্দিতা জানান, দীর্ঘ দিনের অশান্তি থেকে মুক্তি পেতেই রজতকে খুন করেছেন।
কীভাবে খুন করা হয় রজতকে?
জেরায় অনিন্দিতা স্বীকার করেছেন, মোবাইলের চার্জারের তার গলায় পেঁচিয়ে রজতকে খুন করেন তিনি। প্রথমে শাস্তি দিতেই নাকি রজতের গলায় তার পেঁচানো হয়। পরে বুঝতে পারেন তাঁর আইনজীবী স্বামী আর বেঁচে নেই। তখনই নিজেকে বাঁচাতে আত্মহত্যার তত্ত্ব প্রমাণে সচেষ্ট হন অনিন্দিতা।
ঠিক কী কারণে রজতকে খুন?
রজতের বিরুদ্ধে অনিন্দিতার গুরুতর অভিযোগ। পুলিশকে জেরায় অনিন্দিতা জানান , রজতের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের সময় তাঁকে বার বার বিকৃতির শিকার হতে হয়েছে। তাঁর সারা শরীর কামড়ে আনন্দ পেতেন রজত বলে অভিযোগ। প্রায় প্রতি রাতেই এই অত্যাচার অনিন্দিতাকে সহ্য করতে হত। মুক্তি পেতেই রজতকে প্রাণে মারার সিদ্ধান্ত নেন অনিন্দিতা। এই চাঞ্চল্যকর বয়ানের পরই অনিন্দিতা পালের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়।মেডিক্যাল রিপোর্টেও সারা শরীর সহ তাঁর গোপনাঙ্গে কামড়ের চিহ্ন মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
অবশ্য, আইনজীবী রজত দে-কে খুন করার পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে বলে জানান অনিন্দিতা। পুলিশ সূত্রে খবর, রজতের আগে অনিন্দিতা পালের দুটি বিয়ে হয়। যার কোনটাই বেশিদিন টেকেনি। অভিযোগ, বিয়ে করার পর থেকেই আগের দুটি বিয়ে নিয়ে অনিন্দিতাকে কথা শোনাতেন রজত।এমনকী বার বার অনিন্দিতাকে আত্মহত্যার হুমকিও দিতেন। অনিন্দিতার দাবি, গলায় চাদর বা দড়ি পেঁচিয়ে রোজই আত্মঘাতী হওয়ার হুমকি দিতেন রজত।
২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় একই কারণে অনিন্দিতারর সঙ্গে রজতের অশান্তি হয়। ফের স্ত্রীকে গলায় চাদর জড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন রজত।জেরায় পুলিশের কাছে অনিন্দিতা স্বীকার করেন, তখনই মোবাইলের চার্জারের তার গলায় জড়িয়ে রজতের শ্বাসরোধ করেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে যান রজত।
অনিন্দিতার বার বার বয়ান বদল আগেই পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছিল। সেই কারণেই শনিবার তাঁকে আটক করে পুলিশ। রাত পর্যন্ত চলে জেরা। তাই জেরায় অনিন্দিতা খুনের কথা স্বীকার করলেও। রজতকে খুন করার কারণ নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ।রজতের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, সেই নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এই খুনের পিছনে একজন তৃতীয় ব্যক্তির নামও উঠছে। পেশায় ডাক্তার সেই ব্যক্তির সঙ্গে অনিন্দিতার বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বলে আগেই জানিয়েছিলেন রজতের বন্ধুরা। কিন্তু, শনিবার জেরায় অনিন্দিতা একবারও সেই ডাক্তার বন্ধুর নাম নেননি। বার বারই পুলিশের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন। তাই অনিন্দিতাকে আরও জেরা করার প্রয়োজন বলে জানায় নিউটাউন থানার পুলিশ। রবিবার বারাসাত আদালতে পুলিশের তরফে অনিন্দিতাকে হেফাজতে নেওয়ার আবদেন করা হয়।পুলিশের সেই আবেদনই রাখল বারাসাত আদালাত।
Be the first to comment