বিভিন্ন এলাকায় বিধায়ক থেকে শুরু করে ব্লক নেতাদের যে জনসংযোগ কমছে তা ভালই জানেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে একাধিকবার সতর্কও করেছেন। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে প্রশাসনের কর্তা থেকে বিধায়ক, সবাইকে ধমক খেতে হলো মুখ্যমন্ত্রীর। শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোকে তো সরাসরি বলেই দিলেন, “বেশি পাকামো মেরো না। নিজেরা এলাকায় গিয়ে সার্ভিস দাও।”
কয়েক দিন আগেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বন্যপ্রাণীর আক্রমণে কারও মৃত্যু হলে সরকার দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকের মাঝেই শালবনির তৃণমূলের বিধায়ক উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “সরকার বলেছিল বন্যপ্রাণীর আক্রমণে কারও মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের সঙ্গে চাকরি দেবে।” তখনই রেগে যান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “কিচ্ছু জানো না!”
শুধু শালবনির বিধায়ক নন। ধমক খাওয়ার তালিকায় এ দিন নাম উঠেছে কেশিয়াড়ির বিধায়ক পরেশ মুর্মুরও। তাঁকে এ দিন দিদি বলেন, “এত দাও দাও বলো কেন? এত দেওয়ার পরও তো হেরেছ। আগে জেতো তারপর দাও দাও বলবে।”
গত সপ্তাহে জঙ্গলমহলের তিন জেলা ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং দুই বর্ধমানের সফর শেষ করে সোমবার থেকে ফের জেলা সফরে বেরিয়েছেন মমতা। শুরু করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর দিয়ে। সোমবার কেশিয়াড়িতে সরকারি সভাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন প্রশাসনিক সভা থেকে সরকারি আধিকারিক থেকে জনপ্রতিনিধি, সকলকেই কড়া বার্তা দেন মমতা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বিধায়কদের ধমক দেওয়ার পিছনে যথেষ্ট রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, এক দিকে জনতার কাছে বার্তা দেওয়া, পরিষেবা না দিতে পারলে সরকার বিধায়কদেরও রেয়াত করে না। অনেকের মতে, মানুষের স্বার্থে উন্নয়নের কর্মকাণ্ড প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রী যে বদ্ধপরিকর তা-ও বুঝিয়ে দিচ্ছেন কৌশলে। যেমন পুরুলিয়া জেলা সফরে গিয়ে, জেলার কৃষি সমবায়ের চেয়ারম্যান পদ থেকে বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়িকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত পঞ্চায়েতে কেশিয়াড়ির-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গায় শাসক দলকে হারিয়ে ড্যাংড্যাং করে জিতে গিয়েছে বিজেপি। লোকসভার আগে সেই ক্ষততে যেকোনও মূল্যে প্রলেপ দিতে মরিয়া মমতা। গতকালও কেশিয়াড়ির সভায় বলেছেন, “হেরেছি বলেই বারবার কেশিয়াড়ি আসব। হারা জায়গায় ওদের হারাব।” রাজ্যের পরিবহণ ও পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে কেশিয়াড়ির দায়িত্ব দিয়েছেন। যাতে কেশিয়াড়িতে সরকারি প্রকল্প ঠিক করে রূপায়িত হয়। কারণ, পঞ্চায়েতের পর তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় উঠে এসেছিল, হারের কারণ স্থানীয় নেতাদের জনবিচ্ছিন্নতা এবং সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা। লোকসভায় বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ করতে যে এগুলিকে মেরামত করতে হবে তা ভালই জানেন দিদি। আর একের পর এক জেলা সফরে বেরিয়ে সেই কাজই করছেন তিনি।
Be the first to comment