যোগেশ রাজের বিরুদ্ধে গোরক্ষকদের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ, তাজ্জব গ্রামবাসীরা

Spread the love
বুলন্দশহরে পুলিশ খুনে মূল অভিযুক্ত যোগেশ রাজ গোরক্ষকদের নেতৃত্ব দিয়েছে, ভাবতেই পারছে না তার গ্রামের লোকজন। তারা বলছে, যোগেশ দেশপ্রেমিক। কিন্তু নিরীহ ছেলে। সে পুলিশ খুনে জড়িয়ে পড়বে বিশ্বাস হয় না। এদিন গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাইরের দেওয়ালে অখণ্ড ভারতের ম্যাপ আঁকা। তাতে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও মায়ানমারকে যুক্ত করা আছে। অর্থাৎ দেশভাগের আগে ভারতবর্ষের ম্যাপ যা ছিল, তাই বাড়ির বাইরে এঁকে রেখেছে সে।
বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সম্প্রতি এলাকায় ‘অখণ্ড ভারত’ নামে এক প্রচার অভিযান শুরু করেছে। যুবকদের বুঝিয়ে বলা হচ্ছে, অতীতে কীভাবে ভারত ভাগ হয়েছিল। আগামী দিনে ফের যাতে দেশ না ভাগ হয়, সেজন্য সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।
যোগেশের বয়স ২৪। ২০১৬ সালে বজরং দলে যোগ দেয়। আট মাস আগে সে বজরং দলের জেলা আহ্বায়ক হয়। তার নামে দু’টি এফআইআর করেছে পুলিশ। তাতে বলা হয়েছে, পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংকে খুনে যে সাতজন সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল, যোগেশ তাদের অন্যতম।
তার সম্পর্কে নির্দিষ্ট অভিযোগ, সে পুলিশ ইনস্পেক্টরকে আক্রমণ করার জন্য ৫০০ জনের এক জনতাকে উস্কানি দিচ্ছিল। গত সোমবার সুবোধ খুন হন। উত্তেজিত জনতা তাঁর গাড়িটি তাড়া করে। ড্রাইভার মাঠের মাঝখানে গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। জনতার মধ্যে থেকে কেউ সুবোধকে গুলি করে।
যোগেশের কাকিমা ভুরি দেবী জানিয়েছেন, সে বজরং দলের সক্রিয় কর্মী ছিল। কিন্তু কাউকে মারপিটে উসকানি দেয়নি। সে ভালো ছেলে। আচ্ছা ইনসান হ্যায়।
ভুরি দেবীর অভিযোগ, সোমবার মাঝরাতে তাঁদের বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়। তাঁর স্বামী রাম ও ছেলে সোনুকে মারধর করে। তারপর টানতে টানতে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ তাঁকেও মারধর করেছে।
ভুরি দেবীর মেয়ে সুমন জানায়, ‘যোগেশ ভাই’ খুব ভালো ছেলে। গ্রামে হিন্দুদের সাহায্য করে। যোগেশের প্রতিবেশী অঞ্জু নামে এক কলেজছাত্রী জানিয়েছে, বজরং দলের জন্য এলাকায় ইভ টিজিং কমে গিয়েছে।
যোগেশের বন্ধুরা জানিয়েছে, সে আগে বুলন্দশহরে এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করত। বছরখানেক আগে চাকরি ছেড়ে পুরো সময় হিন্দুত্বের স্বার্থে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। সে এখন এলএলবি কোর্স করছে। ক্লাসে খুব কমই যায়। কিন্তু শিক্ষকরা তাকে চেনেন। তাঁরা বলেছেন, অ্যাটেনডেন্স নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। তুমি দেশের স্বার্থে কাজ করো।
দুই নাবালক সম্পর্কে জ্যাঠতুতো ভাই। একজনের বয়স ১১ অন্যজনের ১২। বুলন্দশহরের গো-হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ দায়ের হয়েছে মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে। এই দু’জনেরও নাম রয়েছে সেই তালিকায়। ফলে প্রশ্ন উঠেছে অভিযোগের সত্যতা নিয়েই। এমনটাই তথ্য উঠেছে এসেছে এনডিটিভির সমীক্ষায়। প্রসঙ্গত, পুলিশ অফিসার সুবোধ সিং হত্যা ও গো-হত্যা, অভিযোগ দায়ের হয়েছে দুটি। বুলন্দশহরের নয়াবন গ্রামের কাছে পশুদের দেহাবশে পাওয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়।
ওই নাবালকের পরিবারের দাবি, পুলিশ তাদের ডেকে পাঠিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা জেরা করে। দুই কিশোরের নাম লিখে নেয়। পরিবারের কর্তার মোবাইল নম্বরও টুকে নেয়। পরবর্তীকালে ডাকা হবে বলে জানিয়েও দেয়। গ্রামবাসীদের দাবি, আর যাই হোক ওই দুই নাবালকের দ্বারা গোহত্যা সম্ভব নয়। এমনকী ঘটনার দিন তারা গ্রামেও ছিল না। আরও একজনের নাম রয়েছে, যিনি বর্তমানে হরিয়ানায় থাকেন। ১০ বছরের মধ্যে গ্রামে আসেনি। যেকেউ চাইলে যাচাই করে দেখতে পারেন।
এছাড়াও আরও তিনজন রয়েছে, যাদের গ্রামবাসী হিসেবে দেখানো হয়ছে। যদিও তাদের নাম কস্মিনকালেও গ্রামের কেউ শোনেনি। এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগো নাম রয়েছে। তাই ডাকা হয়েছিল। এখনই কাউকে ধরপাকড় করা হচ্ছে না। তদন্তের পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অথচ দু’দিন আগেই খবরের শিরোনামে এসেছিল বুলন্দশহর। সংখ্যালঘুদের তিন দিনের ধার্মিক অনুষ্ঠান ‘ইজ্তেমা’র জন্য লক্ষ লোকের ভিড় হয়েছে শহরে। আর নমাজের জন্য শনি মন্দির খুলে দিয়েছেন হিন্দুরা। কিন্তু একদিনের মধ্যেই পাল্টে গিয়েছে পরিস্থিতি। হিসেব মেলাতে পারছেন না অনেকেই।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*