গরিব পরিবারের সন্তান, সুখদেব। বাবা পাঁচুগোপাল মণ্ডল দিনমজুর। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়ান। কিন্তু, সেই ছেলেরই মাধ্যমিক পাসের পর পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। কারণ, নম্বর কম থাকার কারণ দেখিয়ে স্কুল ভর্তি নিচ্ছিল না। শেষমেশ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন বাবা। সেখানেই পেলেন বিচার।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের বাসিন্দা পাঁচুগোপাল মণ্ডল। জীবনটা চলে কোনও মতে। দিনমজুরের জীবন যেমন চলার কথা। সংসার জুড়ে শুধুই অভাব আর অভাব। তারই মাঝে আশার আলো বলতে ছোটছেলে সুখদেব। তাকে ঘিরেই আশা, তাকে ঘিরেই স্বপ্ন। বাবার স্বপ্ন, ছেলে একদিন পড়াশোনা করে বড় হবে। ভাল চাকরি করবে। জীবনটা পালটাবে। কিন্তু, সেই পথেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় সুখদেবের স্কুল।
ভাল খেলাধুলা করে বলেও সুখেদেবের পাড়ায় নাম রয়েছে। মাধ্যমিক পাস করে সে ঠিক করে কলা বিভাগে ভর্তি হবে। কিন্তু, অভিযোগ, ভর্তি নাম করে স্কুল কয়েক মাস ধরে ঘোরায়। তারপর জানিয়ে দেয়, ওই স্কুলে কলা বিভাগের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে ন্যূনতম যে নম্বর লাগে তা সুখদেবের নেই। তাই তাকে ভর্তি নেওয়া যাবে না। এর প্রতিবাদেই হাইকোর্টে মামলা করেন সুখদেবের বাবা।
পাঁচুগোপাল মণ্ডলের দুর্দশার কথা শুনে তাঁর পাশে দাঁড়ান আইনজীবী সুনীতকুমার রায়। বিনা পয়সায় তিনি মামলা লড়েন। মঙ্গলবার সেই মামলায় বিচারপতি শেখর ববি সরাফ নির্দেশ দেন যে পঞ্চম থেকে দশম পর্যন্ত কোনও স্কুলে একজন ছাত্র পড়লে ওই স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ওই ছাত্রের জন্য কোনও ন্যূনতম নম্বর রাখা চলবে না। অন্য কোনও স্কুলের পড়ুয়ার ক্ষেত্রে তা রাখতে পারে স্কুল। ৭ দিনের মধ্যে মথুরাপুর আর্য বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতি, সুখদেব মণ্ডলকে স্কুলে ভর্তি নেবে।
মঙ্গলবার তখন ধান ঝাড়ছিলেন পাঁচুগোপাল মণ্ডল। শুনানির খবর পেয়েই চলে আসেন হাইকোর্টে। তারপর এই নির্দেশ। ছেলের হয়ে লড়াইয়ে জিতে বাবার চোখে মুখে আনন্দ। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন পাঁচুগোপাল মণ্ডল। তাঁর ছোটছেলে সুখদেব, পড়াশোনা করে একদিন মস্ত মানুষ হবে। এই স্বপ্নেই বিভোর বাবা।
Be the first to comment