বাজকুলের অনুষ্ঠানে সিপিএম ও বিজেপিকে একহাত নিলেন মমতা

Spread the love

পিয়ালি আচার্য,

পূর্ব মেদিনীপুরের বাজকুলে সরকারী পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে ৫ ডিসেম্বর, বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মা মাটি মানুষ সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। তবে জায়গাটা যেহেতু বাজকুল অর্থাৎ নন্দীগ্রামের খুবই কাছে তাই উঠে এলো ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের অত্যাচার প্রসঙ্গ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, স্বাধীনতার আগেই যেমন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা বহু লড়াই, আন্দোলন, সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে তেমনি স্বাধীনতার নন্দীগ্রাম, খেজুরি, হেড়িয়া, পটাশপুর, এগরা, চন্ডীপুর, বাজকুল, পাঁশকুড়া একের পর এক জায়গায় অত্যাচার চালিয়েছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। তাঁর উপরেও নেমে এসেছিলো আক্রমণ। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় কোলাঘাটের বাঁশ-রেলিংয়ের ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয় তাঁকে। এছাড়া মদ খেয়ে আশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ এবং অ্যাসিড বাল্ব ছুঁড়ে মারার হুমকিও দিয়েছিল তৎকালীন শাসক দল সিপিএম।

তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বিজেপিকে একহাত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নন্দীগ্রাম খুনে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অর্থাৎ নাম না করে লক্ষন শেঠকে উল্লেখ করে বলেন, লজ্জা করে না? বড় বড় কথা বলতেন আর এখন বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। আমরা এইসব লোককে নিজেদের পার্টিতে নিই না। নোটবন্দী প্রসঙ্গ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে বলেন, এর ফলে মানুষ অসহায়, গুজরাট থেকে মালদা, মুর্শিদাবাদ, বিহারের সমস্ত মানুষ ব্যবসা-বানিজ্য করতে গিয়েছিলেন। তাদের খেদিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এনআরসির নাম করে যাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে তারা বেশীরভাগই হিন্দু বাঙালী। যারা হিন্দু হিন্দু করে মিথ্যা কথা বলেন, তারা জেনে রাখবেন হিন্দু ধর্ম বহু পুরনো ধর্ম। নাম না করে বিজেপিকে বলেন, স্বাধীনতার সময় তো ওদের জন্মই হয় নি। দুর্গা-কালী প্রভৃতি দেবদেবীর পুজো কী আমরা আজ থেকে করছি? হিন্দু ধর্ম হাজার হাজার বছর আগেকার। ঋক, সাম, যজু, অথর্ব বেদ এগুলি বহু পুরানো। ওরা কে হরিদাস? যে এক সময় খেতে পেতো না আর এখন কোটি কোটি টাকা দিয়ে রাবণ যাত্রা করছে? রাবণ যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এরা হনুমানকে দলিত বলছে। প্রশ্ন তুলছে যে তোমাদের জাত কী? ধর্ম কী? তোমরা কী দলিত? নাকি সংখ্যালঘু, নাকি খ্রিষ্টান, নাকি মুসলমান?

এরপর আবারও তিনি ফিরে আসেন বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের জমানার অত্যাচার প্রসঙ্গে। বলেন, ৩৪ বছর লড়াই করে সিপিএমের কবল থেকে বাংলাকে মুক্ত করা গিয়েছে। আর সেই সিপিএমগুলোই বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। দাঙ্গা, লোক খুনের রাজনীতি করছে। দীর্ঘ কণ্ঠে মমতা বলেন, রাজনৈতিক লড়াইয়ে তোমাদের তাড়াবো। আগামীদিনে হার্মাদদের কবলে পশ্চিমবঙ্গকে পড়তে দেবো না। বলেন আমাকে আঘাত করলে আমি প্রত্যাঘাত করবোই।

এছাড়া সবুজশ্রী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী, স্বাস্থ্য সাথী, মাভৈ, খাদ্য সাথী প্রভৃতি প্রকল্পের সুফল যে রাজ্যের প্রায় সমস্ত মানুষ পাচ্ছেন তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। কেলেঘাই, কপালেশ্বরী নদী প্রতিবছর বন্যা ডেকে আনতো এই জেলায়। তাকে নিয়ন্ত্রন করার কাজও মা মাটি মানুষই করেছে।

এদিন পরিষেবা প্রদানের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের হাতে পিঙ্ক ক্যাব বা গোলাপি গাড়ির চাবি তুলে দেন। গোলাপি পোশাক পড়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী মেয়েরা মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে এই চাবি গ্রহণ করে। এছাড়া সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রভৃতি প্রকল্পের পরিষেবা প্রদান করা হয় মঞ্চ থেকে। এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। এছাড়াও ছিলেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী এবং পূর্ব মেদিনীপুরের বিধায়ক, পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান, জেলা সভাধিপতি সহ বহু প্রশাসনিক কর্তারা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*