নিজামউদ্দিন মোল্লাঃ
মানুষ জন্ম থেকেই খারাপ হয় না, পরিবেশ তাকে খারাপ করে। এই কথা টা বিমল বলল।
তাহলে গোড়ার কথা বলি, আমাদের ক্লাবে আমরা মানে বন্ধুরা মিলে আলোচনা হচ্ছে। খুব সাধারণ বিষয়ে, নূর প্রথমে বলেছিল, ” ঘুষ ছাড়া কি এখন কোনো কাজ হয় না।”
বিমল মত টি মেনে নিয়ে অনেক কাহিনী বলেছিল ঘুষ এর, সেই কাহিনী গুলো সত্যি অসাধারণ হতে পারত, যদি বিমল রহস্য গল্প জানত। তাই একটা কাহিনীর শেষে প্রথমের উক্তিটি করেছিল।
তাহলে সেই বিমলের বিশেষ কাহিনী টাই বলি তোমাদের। বয়স তখন আমার বছর কুড়ি হবে, সবে মাত্র আমি স্নাতক পাশ করেছি, চাকরীর খুবই প্রয়োজন তাই মুম্বাই শহরে রওনা হলাম, কারণ কাজ টা খুবই প্রয়োজন, ওখানে কোনো না কোনো কাজ পেয়েই যাব ।
হাওড়া থেকে ট্রেনে উঠেছি টিকিট কাটার টাকা ও নেই। আসলে সবার মুখে শুনেছি, বিনা টিকিটে ট্রেনে যাওয়ায় কোনো অসুবিধাই হয় না। কিন্তু ধারণা টাই ভুল ছিল আমার, কারণ আমাকে ধরল বিনাটিকিট এর জন্য। টিসি আমার কাছে ফাইন চাইল না, সোজা নিয়ে গিয়ে রেলওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিল।রাত অনেক প্রায় ২টো বাজে, এদিকে ট্রেন টা সামনে দিয়ে ছেড়ে পালাল। আমি খুব অস্থির হয়ে পড়লাম। একটা পুলিশ পাশেবসে ছিল তাকেই জিজ্ঞাসা করলাম, ” আচ্ছা স্যার আমাকে ছাড়বেন না?”
“তোমাকে ছাড়ব কেন?” বেশ রেগেই বলল পুলিশ, আমি আবার বললাম, ” স্যার আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ!”
” হাহাহাহা, তোকে ছাড়ব একটাই কারণে”
আমি উৎসাহিত হয়ে বলি, “কি কারণে?”
” একহাজার এর একটা নোট দিলেই হবে, তাহলেই তোকে ছাড়ব।”
এ পুলিশ বলে কি, টাকা একহাজার টাকা পাব কোথা থেকে! আমি বিনীত ভাবে বলি, ” আমি অত টাকা কোথায় পাব স্যার! আমি খুব গরিব।”
পুলিশ টা তখন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল, আর বলল, “তাহলে কিছুই করার নেই আমার। কালই তোকে মল্লিকফটকে পাঠাব।”
কথাটা শুনেই আমি আঁতকে উঠলাম, মল্লিকফটকে। আচ্ছা দেশে তো এত আইনের ফাঁক করে অনেক জন বেঁচে যাচ্ছে, আর এর মূলে এই টাকা। এই টাকা হল তাহলে আইনের চেয়েও মূল্যবান। যার কাছে টাকা নেই, সেই আইনের ফাঁদে পড়বে, টাকা থাকলেই সে বেঁচে যাবে।উফফ এটা কি ঠিক?
আস্তে আস্তে রাত তিনটে বাজল, চারিদিক ফাঁকা, পাশে বসে থাকা পুলিশটা ছাড়া ও দেখি অন্য এক পুলিশ এসে হাজির, সে আমার দিকে কড়া মেজাজে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “কি নাম তোর?”
” আজ্ঞে বিমল মাহাত।”
” কোথায় বাড়ি.?”
” এই মন্দিরতলা ছাড়িয়ে পুরাতন বস্তিতে।”
” অহ তা টিকিট কাটিসনি কেন?”
” আজ্ঞে টাকা নেই তাই, কাজের জন্য যাচ্ছি। ”
” তোর বয়স ও তো কম। তা কিছু টাকা থাকলে দিয়ে পালা।”
এদেখি আগের পুলিশেরই মতো, শুধু টাকাই চাই।আমি তখন একটু ভীতু হয়ে বলি, ” আজ্ঞে টাকা তো নেই। প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন।”
কেউ আর কথা শুনল না আমার, আমাকে জেলেই পুরে দিল পরের দিন।
প্রায় তিনমাস পরে ছাড়া পেলাম, কেউ খবর রাখেনি আমার কারণ টাই সহজ, মা বাবা পরিবার তো আমার নেই কি করব।
তার পর থেকেই আমি ব্যবসা শুরু করি ঘুষ এর। জেলে অনেক কয়েদির কাছে আড্ডা দিয়ে বেশ সাহসিকতা লাভ করেছি, ক্রিমিনাল আইডিয়া ও পেয়েছি।
হাহাহাহা, শুরু করলাম নতুন ব্যবসা ঘুষ। সে কি বলব এই ব্যবসা আমাকে বড় করল।
ব্যবসা টা হল, রাস্তায় বড় বড় ট্রাক কে থামিয়ে রাতের বেলায় ঘুষ নিতাম। গোটাকয়েক ছেলে কে নিয়ে বেশ ভালোই চলতে লাগল।।এই লুট বা ডাকাতির মজা কি তুমি বুঝবে না এর মজাই আলাদা।
এই ভাবে চলতে চলতে একদিন ডোমজুর থানা থেকে কিছু পুলিশ আমাদের ধরল, তোলাবাজি করার সময়, এবারে আর কি! ধরিয়ে দিলাম দুটো দুহাজারের নোট দারোগা বাবুর হাতে সব ঠিক হয়ে গেল। জানিস ভাই, এই ঘুষ খুব খারাপ জিনিস কিন্তু, এই ঘুষই আমার জীবনের পথ খুলে দিলে, শুরু করেদিলাম পুলিশ আর আমাদের মিলেমিশে কাজ।
এই টুকু বলতে বলতে, বিমল বলল, ” থাক একটা কাজ মনে পড়ে গেল, বাকিটা পরে বলব।”
নূর ইসলাম বলে উঠল, ” বিমল ভাই কাহিনী টা পূরণ করলে ক্ষতি নাকি?”
” নাহে নূর। শুধু একটাই কথা বলি, মানুষ জন্ম থেকে খারাপ হয় না, পরিবেশ তাকে খারাপ করে।” এই বলে বিমল উঠল। এবার তোমরাই বিচার করো বিমল কি সত্যি ঠিক? আমার চোখে তো খারাপ পেলাম না। কে জানি বিমলই হয়ত ঠিক।।
Be the first to comment