পাঁচ বছর আগে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়ে বিধানসভা ভোটের পর এক্সিট পোল তথা বুথ ফেরত সমীক্ষা চালিয়েছিল ‘টুডেজ চাণক্য’। ভোট গণনার পর দেখা যায় প্রকৃত ফলাফলের সঙ্গে তা হুবহু মিলে গিয়েছিল।
সমীক্ষার পর সে বার চাণক্যের পূর্বানুমান ছিল, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগড়- এই তিনটি রাজ্যেই বিজেপি বিপুল ব্যবধানে জিতবে। এ বার হিন্দিবলয়ের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের পর আগের বারের তুলনায় একেবারেই উল্টো ভবিষ্যদ্বাণী করল চাণক্য। বুথ ফেরত সমীক্ষা করে জানিয়ে দিল, তিন রাজ্যেই ডাহা হারতে পারে বিজেপি।
মধ্যপ্রদেশ
চাণক্যের সমীক্ষা অনুযায়ী মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস পেতে পারে ৪৫ (+/-৩)শতাংশ ভোট। তুলনায় বিজেপি পেতে পারে ৪১(+/-৩)শতাংশ ভোট। বাকিরা পেতে পারে ১৪(+/-৩) শতাংশ ভোট। প্রাপ্ত ভোট শতাংশকে আসনের বিচারে হিসাব করে চাণক্য মনে করছে মধ্যপ্রদেশের ২৩০ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেতে পারে ১২৫(+/-১২) টি আসন। মানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে নির্বাচিত হতে সরকার গড়তে পারে কংগ্রেস। বিজেপি পেতে পারে ১১২(+/-১২) আসন। বাকিরা ২ থেকে ৭টি আসনে জিততে পারে।
রাজস্থান
মরু রাজ্যে ভোট গ্রহণ হয়েছে শুক্রবার। তার পর বুথ ফেরত সমীক্ষা করে চাণক্য জানিয়েছে রাজস্থানে ভয়াবহ ভরাডুবি হতে পারে ক্ষমতাসীন বিজেপি-র। কংগ্রেস সেখানে পেতে পারে ৪৭(+/-৩) শতাংশ ভোট। বিজেপি-র ঝুলিতে যেতে পারে ৩৭(+/-৩) শতাংশ ভোট। তাদের মধ্যে কংগ্রেস বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে ১০ শতাংশ ফারাক হওয়ার অর্থ আসনের বিচারে বিপুল ব্যবধান। ২০০টি আসনের রাজস্থান বিধানসভায় কংগ্রেস পেতে পারে ১২৩(+/-১২)টি আসন। তুলনায় কংগ্রেসের প্রায় অর্ধেক তথা ৬৮(+/-১২) টি আসনে জিততে পারে বিজেপি। অন্যান্যরা পেতে পারে কমবেশি ৮টি আসন।
ছত্তীসগড়
এ বার বিধানসভা ভোটের আগে থেকে সাধারণ ধারনা ছিল ছত্তীসগড়ে পাল্লা ভারী বিজেপি-র। কারণ রাজ্যে একে তো কংগ্রেসের নেতৃত্বের সংকট। তার উপর কারণ মায়াবতী ও অজিত যোগী বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়ে কংগ্রেসের যাত্রাভঙ্গ করতে পারে। কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষার পর চাণক্য জানিয়েছে, ছত্তীসগড়ে বিজেপি-র রমন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এতোটাই তীব্র যে মায়া-যোগী ভোট কাটার পরেও ৪২(+/-৩) শতাংশ ভোট পেতে পারে কংগ্রেস। বিজেপি পেতে পারে ৩৮(+/-৩) শতাংশ ভোট। আর বহুজন সমাজ পার্টি ও অজিত যোগীর জোট পেতে পারে ২০(+/-৩) শতাংশ ভোট। যার অর্থ মায়াবতী যদি ভোট না কাটতেন তা হলে ছত্তীসগড়ে তছনছ হয়ে যেত বিজেপি-র দুর্গ। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট তখন ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারত।
চাণক্যের মতে ভোট শতাংশকে আসনের বিচারে হিসাব করলে স্বস্তিজনক ব্যবধানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে নির্বাচিত হতে পারে কংগ্রেস। ছত্তীসগড় বিধানসভায় ৯০ টি আসন রয়েছে। তার মধ্যে রাহুল গান্ধীর দল কংগ্রেস পেতে পারে ৫০টি(+/-৮) আসন। বিজেপি পেতে পারে ৩৬টি আসন(+/-৮)। মায়া-যোগীর জোট পেতে পারে কমবেশি চারটি আসন।
প্রসঙ্গত, শুধু এই তিন রাজ্যে গত ভোটের পর বুথ ফেরত সমীক্ষা নয়, চোদ্দ-র লোকসভা ভোটে, তার পর উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটে চাণক্যের এক্সিট পোলের পূর্বানুমান হুবহু মিলে গিয়েছিল। তবে চাণক্যের ভুলের নজিরও রয়েছে। বিহারে গত বিধানসভা ভোটে চাণক্যের পূর্বানুমান একটুও মেলেনি। কিন্তু সেটাই বলতে গেলে এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম মাত্র। তা ছাড়া এক্সিট পোল করার ক্ষেত্রে বর্তমানে শিরোপার মুকুট তাঁদের মাথাতেই রয়েছে। ঘটনা হল, চোদ্দর ভোট বা উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের পর চাণক্যের বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়ে আহ্লাদে আটখানা ছিল বিজেপি। তবে শুক্রবার তিন রাজ্যের ভোটের সমীক্ষার পর বিজেপি-র মুখপাত্ররা বলছেন, আর তিন দিন অপেক্ষা করুন না, তার পরই তো আসল ফল বেরিয়ে যাবে।
কিন্তু সে তো মুখের কথা। ভিতরে ভিতরে কি দুরু দুরু করছে না বিজেপি নেতাদের বুকের ভিতর!
Be the first to comment