যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে শোনা যাচ্ছে ‘শোঁ শোঁ’ আওয়াজ। কয়েক সেকেন্ড ধরে ইনসাইটের ভাইব্রেটরে ধরা পড়ল এই আওয়াজ। নাসায় বসে গবেষকরা মঙ্গলের মাটি থেকে প্রথম শব্দ পেলেন।
নভেম্বরের ২৬ তারিখ যাত্রা শুরু করে ২৭ তারিখ মঙ্গলে পা রেখেছিল নাসার মহাকাশযান ‘ইনসাইট’। প্রধান কাজ ছিল মঙ্গলের মাটি ও মাটির তলার পরীক্ষা করা। কীভাবে তৈরি হয়েছে লালগ্রহের মাটি, মাটির নীচের টেকটনিক গঠন কীরকম, সে সব নিয়েই প্রথম পূর্ণাঙ্গ গবেষণা করার জন্যই মঙ্গলে পাঠানো হয়েছিল স্বয়ংক্রিয় মহাকাশযান ইনসাইট। গবেষণা করে সেই রিপোর্ট নাসায় পাঠানোর কথা এই মহাকাশযানের। টানা ১ বছর ধরে মঙ্গলের মাটিতে নিজের গবেষণা চালাবে ইনসাইট।
কিন্তু নিজের কাজের বাইরে গিয়ে শুক্রবার এমন কিছু খবর নাসায় পাঠালো ইনসাইট, যাতে রীতিমতো শিহরিত হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৭৬ সালে নাসার ভাইকিং ১ ও ২ মহাকাশযান মঙ্গল থেকে হাওয়ার শব্দ পাঠিয়েছিল পৃথিবীতে। তারপর থেকে আর এই ধরণের কোনও আওয়াজ বিজ্জানীরা পাননি। দীর্ঘ ৪২ বছর পর ফের মঙ্গলের আওয়াজ শুনল নাসা।
শুক্রবার বিকেল ৫ টা নাগাদ ইনসাইটের সোলার প্যানেল নড়তে শুরু করে। তারপরেই ইনসাইটের দুটি ল্যান্ডারে ভাইব্রেশন ধরা পড়ে। মাত্র কয়েক মিনিটের জন্যই এই ভাইব্রেশন দেখা যায়। ল্যান্ডারে পাওয়া যায় হাওয়ার মতো শব্দ। দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে এই হাওয়ার মতো শব্দ বইছে।
নাসার বিজ্ঞানী থমাস পাইক জানিয়েছেন, ” ১৫ মিনিটের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। ইনসাইটের মধ্যে থাকা সিসমোমিটার থেকে এই আওয়াজ আমরা পেয়েছি। শব্দ শুনে মনে হচ্ছে হাওয়ার মধ্যে কোনও পতাকা পতপত করে উড়ছে। কিন্তু এই শব্দ শুনে মনে হচ্ছে বাইরের কোনও গ্রহের শব্দ। পুরো গবেষণা না করে এই ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না।”
তবে নাসার আরেক বিজ্জানী ব্রুস বানের্ড জানিয়েছেন, ” এটার পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। এটা আমাদের কাছে সারপ্রাইজ। শব্দ শুনে আমার মনে হচ্ছে গ্রীষ্মের বিকেলে বসে আছি। হাওয়া এসে আমার কানের পাস দিয়ে সুন্দর আওয়াজ করে বেরিয়ে যাচ্ছে।”
মঙ্গল থেকে পাওয়া শব্দ হাওয়ার কিনা, তা জানতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলেই জানিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। কারণ যতদিন না আরও কিছু তথ্য মঙ্গল থেকে আসছে ততদিন নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না। কিন্তু মঙ্গল থেকে পাওয়া এই সারপ্রাইজ, শোঁ শোঁ এই আওয়াজ এক নতুন উদ্যম, নতুন উৎসাহ জাগিয়ে তুলেছে নাসার বিজ্ঞানীদের সামনে।
Be the first to comment