মুখে সবসময় হাসি থাকলেও খুব স্বস্তিতে কী কাজ করতে পারেন বিমানসেবিকারা?

Spread the love
আকাশে ওঁরা ওড়েন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মুখে হাসি আর ধৈর্য ধরে রেখে সামলান শয়ে শয়ে যাত্রীর নানা আবদার। যতক্ষণ বিমান আকাশে থাকে, ওঁরা এক মিনিটও বিশ্রাম পান না। সুন্দরী এয়ারহস্টেসদের ছবি ছাড়া হয় না কোনও বিমানসংস্থার বিজ্ঞাপনই। কিন্তু খুব কি স্বস্তিতে কাজ করতে পারেন বিমানসেবিকারা?
প্রতি মুহূর্তে তাঁদের মুখে হাসি বজায় রেখে লড়াই করতে হয় যৌন হেনস্থার সঙ্গে। কখনও কোনও যাত্রী অভব্যতা করছেন, তো কখনও পাইলট। মহিলা কেবিন ক্রু-দের কাজের জগতে লড়াইটা কার্যত নীরবই থেকে যায়। #মিটু আন্দোলনের জোয়ার এখনও সেখানে আছড়ে পড়তে পারেনি। কিন্তু সম্প্রতি হংকং-এর বিমানসেবিকারা ঠিক করেছেন, যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়। তাঁরা গড়ে তুলেছেন কেবিন অ্যাটেন্ড্যান্টস ইউনিয়ন অব হংকং। নানা বিমানসংস্থার কেবিন ক্রু-রা রয়েছেন সেই ইউনিয়নে। তাঁদেরই এক জন ভেনাস ফুং।
নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে ২৯ বছরের ভেনাস জানিয়েছেন, বছর দুয়েক আগে কাজে যোগ দেওয়ার পরেই  তাঁকে এক পাইলট একদিন বলেন, তাঁর ফিগার খুব সুন্দর। সেখানেই থামেননি তিনি, ভেনাসের বুক, কোমর ও নিতম্ব স্পর্শ করেন। বারবার বলতে থাকেন, ভেনাসের শরীরের বাঁধুনি অসাধারণ। সামনেই ছিলেন ওই সংস্থার কেবিন ম্যানেজার। তিনি পাইলটকে কিছু না বলে উল্টে ভেনাস খুব টাইট স্কার্ট পরেছেন বলে তাঁকেই বকাঝকা করতে শুরু করেন। ভেনাস জানান, তিনি একটি ইউরোপীয় এয়ারলাইন্সে কাজ করেন। তিনি হতভম্ব হয়ে যান ওই পাইলট ও কেবিন ম্যানেজারের আচরণে। কিন্তু চাকরি যাওয়ার ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। কিন্তু সেদিনের পর থেকে স্কার্টের বদলে ট্রাউজ়ার্স পরতে শুরু করেন ভেনাস।
এয়ারহস্টেসদের কাজের প্রয়োজনে সুন্দর ভাবে থাকতে হয়, বলেন ভেনাস। তাঁরা মেক আপ করেন, হাই হিল ও ইউনিফর্ম পরেন। তার মানে এই নয়, তাঁদের কাজকে খাটো করে দেখে সাজগোজকে যৌন হেনস্থার ছুতো করবে কেউ। এ নিয়ে বড় আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন ভেনাস। মানুষের মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে।
বিমানসেবিকা মানেই তাঁকে যৌনতা ও শারীরিক আকর্ষণের নিরিখে দেখা হবে, এটা কিন্তু বহু দশক ধরেই চলে আসছে। কিছুদিন আগে ভিয়েতনামের একটি এয়ারলাইন্স এমন একটি কাণ্ড করে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। সংস্থাটি তাদের প্রথম কয়েকটি উড়ানে বিকিনি-পরা এয়ারহস্টেসদের রাখে। যাত্রী টানার জন্য। এবং সেই সব বিকিনি-পরিহিত কেবিন ক্রু-দের ছবি দিয়ে একটি ক্যালেন্ডারও বানায়। মজার বিষয় হলো, সেই সংস্থার মালকিন কিন্তু নিজেও এক মহিলা। তবে মানুষ এটা ভালো ভাবে নেয়নি।
এয়ার হস্টেসদের যৌন আবেদনটাই বড় করে দেখা হয়, কাজটা নয়। এ কথা মনে করেন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত বহু কর্মীই। বিমানসেবিকাদের অনেক সময়েই চড়া মেক আপ করতে বাধ্য করা হয়। টাইট ও ছোট স্কার্ট পরাও নিয়মের মধ্যে পড়ে। অথচ দীর্ঘ আকাশ যাত্রায় ওই রকম আঁটো পোশাকে অসুবিধে হয় অনেকেরই। কিছু এয়ারলাইন্স অবশ্য স্কার্টের পরিবর্তে ট্রাউজ়ার্স পরতে অনুমতি দিচ্ছে আজকাল। সাজগোজ ও পোশাকআশাকে এই পেশাকে খালি যৌনতা ও শারীরিক সৌন্দর্য়ের সঙ্গে এক করে দেখার দিন শেষ করার সময় এসেছে বলে মনে করছে হংকং-এর ইউনিয়নটি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*