২০২০-এর অলিম্পিক এবং প্যারা অলিম্পিকের পদকগুলি তৈরি হবে ই-বর্জ্য থেকে

Spread the love
এই গেমস আজকের নয়। প্রাচীন যুগের। উৎসস্থল গ্রীস। এবং উপহার, জলপাই পাতার মুকুট। এমনই ছিল অলিম্পিক গেমসের চেহারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসে সবেরই। সেই পরিবর্তনের নিয়ম  মেনে ১৮৯৬ সালে শুরু হয় আধুনিক অলিম্পিক। আর তখন থেকেই উপহার হিসেবে চালু হয় ধাতব পদকের। জয়ীকে দেওয়া হতো রুপো এবং দ্বিতীয় জয়ীকে দেওয়া হতো তামার পদক।
বদল আসে আরও বেশি। ১৯০৪ সাল থেকে অলিম্পিক গেমসের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া প্রতিযোগীদের যথাক্রমে সোনা, রুপো এবং ব্রোঞ্জের পদক দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়। সোনার পদকে থাকে ৫৫০ গ্রাম রুপো আর ছ’গ্রাম সোনা। রুপোর পদকে থেকে ৫০৯ গ্রাম রুপো এবং ৪১ গ্রাম তামা। সর্বশেষ, ব্রোঞ্জ পদক বানানো হয় তামা, টিন আর দস্তা বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে।
প্রতি চার বছর ছাড়া এভাবেই চলছে অলিম্পিক গেমস। সেই হিসেবেই আগামী ২০২০ সালে, জাপানে অনুষ্ঠিত হবে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং প্যারাঅলিম্পিক। দেশ-বিদেশের হাজারো প্রতিযোগী অংশ নেবেন এই আসরে। প্রতিটি প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের গলায় ঝুলবে বিজয়ের জয়মাল্য। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পাঁচ হাজার পদক বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।
কিন্তু এই বছরে বানানো পদকগুলো সরাসরি নীরেট ধাতু থেকে তৈরি হচ্ছে না। পদকগুলি নির্মিত হবে ই-বর্জ্য থেকে।
কী এই ই-বর্জ্য? বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স জিনিস সে মোবাইল হোক বা ফ্রিজ, টিভি হোক বা মাইক্রোওয়েভ– নষ্ট হয়ে গেলে যে ধাতব কাঠামোগুলি পড়ে থাকে অকেজো হয়ে। সেগুলিকেই পরিভাষায় বলা হয় ই-বর্জ্য। এতগুলি পদকের জন্য এত ই-বর্জ্য জোগাড়ের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও। হিতাচি, সনি, প্যানাসনিক– ইত্যাদি বিভিন্ন প্রযুক্তির আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত জাপান। তার অন্যতম বড় সমস্যা হল এই ই-বর্জ্য
মোবাইল, কম্পিউটার কিংবা ছোটোখাটো ক্যালকুলেটর, এই সব যন্ত্রের প্রতিটিতেই থাকে খুব অল্প পরিমাণ সোনা, রুপো, তামা, টিন, দস্তার মতো ধাতু। তৈরির সময়েই এই ধাতুগুলো থাকে ইলেকট্রনিক যন্ত্রের অভ্যন্তরে। এবং জাপান যেহেতু খনিজ সম্পদে পর্যাপ্ত নয়, তাই জনগণের হাতে জমা থাকা বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক বর্জ্য সংগ্রহ করে সেখান থেকে মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ করে অলিম্পিকের পদক বানানোর পদক্ষেপ নিয়েছে অলিম্পিক আয়োজকরা।
বস্তুত, প্রতিদিন নতুন ইলেকট্রনিক পণ্য বাজারে এসে যাওয়ায় গ্রাহকেরা প্রায়ই পরিত্যাগ করছেন পুরোনো পণ্যটি। তৈরি হচ্ছে ইলেকট্রনিক পণ্যের বিশাল জঞ্জাল।  তথ্য বলছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে জমা হয়েছে প্রায় ৪৪.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য! এবং প্রতি বছর এই বর্জ্যের পরিমাণ ৩-৪ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ই-বর্জ্যের তালিকায় পুরনো মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ফ্রিজ, টেলিভিশন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, কম্পিউটার সবই আছে।
পৃথিবীর স্বার্থে এই সমস্ত ই-বর্জ্যকে পুনরায় কাজে লাগানো জরুরি। সেখানে এই বর্জ্য কাজে লাগিয়ে অলিম্পিকের মেডেল তৈরির পরিকল্পনাটি অসাধারণ। এই কাজ সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য সারা দেশকে তাদের ই-বর্জ্য জমা দিতে অনুরোধ করেছে  টোকিও অলিম্পিক কমিটি। এই কথা ঘোষণার এক বছরের মাথায় জমা পড়া ই-বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬.৩ কেজি সোনা। পদক বানাতে যতটা সোনা প্রয়োজন, তার দ্বিগুণ হয় এটা। একই ভাবে জোগাড় হয়েছে অন্যান্য ধাতুও।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*