পথ-নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা যত বাড়ছে, ততই যেন পরিষ্কার হচ্ছে তার খামতিগুলোও। আর সেই খামতিরই বলি হলেন ৪৮ বছরের সুমন্ত চৌধুরী। পুলিশ জানিয়েছে, সার্ভে পার্ক থানা এলাকার সন্তোষপুরের সাউথ পার্কের বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ী রবিবার গভীর রাতে মারা গিয়েছেন দুর্ঘটনায়। বাইপাসের পাটুলি মোড় থেকে ঘোষপাড়া পেরিয়ে বাঘা যতীন উড়ালপুলের ঠিক আগে প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চালানোর সময়ে ডিভাইডারে ধাক্কা লাগায় এই মর্মান্তিক পরিণতি ঘটে।
সুমন্তর পরিবারের অভিযোগ, ওই রাস্তার ডিভাইডারে ফ্লুরোসেন্ট কোটিং ছিল না। সাধারণত, রাতে ব্রিজ বা রাস্তার ডিভাইডার চিহ্নিত করার জন্য ফ্লুরোসেন্ট কোটিং থাকে। যেখানে আলো পড়ে জ্বলজ্বল করে পথ নির্দেশ করে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যই এই ব্যবস্থা। কিন্তু পাটুলি বাইপাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ব্রিজের সামনে ও উপরে এ ধরনের কোনও ব্যবস্থা নজরে আসেনি।সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ঘোষপাড়ার দিকে রাস্তার বাঁক থেকে গাড়িটি বেসামাল হয়ে ধাক্কা মারে ডিভাইডারে। সাত ফুট উপরে উঠে পাশের গাছে ধাক্কা মেরে গ্রিল ভেঙে দক্ষিণগামী লেনে গিয়ে পড়ে গাড়িটি। গাছটির ছাল উঠে গিয়েছে। ভেঙেছে ডিভাইডার। এই অবস্থায় শহরের অনেক রাস্তা এবং উড়ালপুলে ফ্লুরোসেন্ট মার্কার না-থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে।শুধু ফ্লুরোসেন্টের খামতি নয়। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের বিভিন্ন জায়গাতেই বসেছে স্পিড মিটার। গাড়ির সর্বোচ্চ গতি কত হবে, তা-ও লেখা আছে বাইপাসের বিভিন্ন জায়গায়। ট্র্যাফিক পুলিশের দাবি, দিনভর বাইপাসে টহলদারিও চলে। ওই রাস্তায় বেঁধে দেওয়া গতির থেকে জোরে গাড়ি চললেই চালককে ধরে জরিমানা করে পুলিশ। তবু বাইপাসের গতি যে এখনও লাগামছাড়া, তা ফের প্রমাণিত হল রবিবার রাতে। পুলিশের অনুমান, তাঁর গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় একশো কিলোমিটারের বেশি। প্রশ্ন উঠেছে, গাড়ি অতটা গতি নিল কী করে? নজরদারি ছিল না কেন?
সুমন্তবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি রবিবার রাতে পাটুলির এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। গাড়িতে একাই ছিলেন তিনি। ঘোষপাড়ার কয়েক জন বাসিন্দা জানান, বাঘা যতীন উড়ালপুলের কাছে জোরে একটি শব্দে তাঁরা চমকে ওঠেন। তাঁরা সেখানে গিয়ে দেখেন, ডিভাইভারে ধাক্কা মেরে একটি লাল রঙের গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। গাড়ির চালকের আসনে রক্তাক্ত অবস্থায় আটকে ছিলেন সুমন্তবাবু। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাই পাটুলি থানায় খবর দেন। কিন্তু গাড়িটি দুমড়ে যাওয়ায় জখম সুমন্তবাবুকে বার করে আনতে সমস্যা হয়। শেষে বিপর্যয় মোকাবিলার বাহিনী গ্যাস কাটার দিয়ে গাড়ির দরজা কেটে সুমন্তবাবুকে বার করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই ব্যক্তিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা
ঘটনার পরেই আত্মীয়-প্রতিবেশীর ভিড় ভেঙে পড়ে শোকের বাড়িতে। ইন্টিরিয়র ডিজাইনিংয়ের ব্যবসা ছিল সুমন্তবাবুর। বাড়ির দোতলাতেই তাঁর অফিস। বাড়ির পাশে বাবার মুদির দোকান। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও বাবা রয়েছেন। মেয়ে আরশি দশম শ্রেণির পড়ুয়া।
সুমন্তর বাবা দীপক চৌধুরী বলেন, “ও বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল। ফিরছে না দেখে চিন্তা হচ্ছিল। রাত বারোটা নাগাদ ফোন করি। ধরেনি। পরে রাত দেড়টা নাগাদ ছেলের ফোন থেকে বউমার ফোনে ফোন আসে। তখনই পুলিশ জানায় ওর দুর্ঘটনা হয়েছে, অবস্থা খারাপ।”এর পরে সকলে হাসপাতালে যান। ততক্ষণে সব শেষ। সুমন্তর স্ত্রী সুতপা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর দাবি, স্থানীয়দের থেকে তিনি জেনেছেন, সামনে এসে পড়া একটি অটোকে বাঁচাতে গিয়েই সুমন্ত ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন। পুলিশ জানিয়েছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে ঘটনাটি।
Be the first to comment