গত নির্বাচনে মরু রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছিল কংগ্রেস। তারপর রাহুল গান্ধী সর্বভারতীয় কংগ্রেসের ব্যাটন হাতে নেওয়ার পর, তাঁর অত্যন্ত স্নেহধন্য শচীন পাইলটকে পাঠিয়েছিলেন রাজস্থান কংগ্রেসের দায়িত্ব দিয়ে। মঙ্গলবার ভোটের ফল প্রকাশের পর পরিষ্কার, সে দিন কোনও ভুল করেননি রাহুল। নিজে তো ৫৪ হাজারের ভোটে জিতলেনই। ভেঙে যাওয়া কংগ্রেসের সংগঠনে জোড়া লাগিয়ে ফেরালেন মসনদেও।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে হবেন রাজস্থানের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী?
এই রাজ্যে কংগ্রেসের একশোর বেশি আসন জেতাকে অনেকেই আবার শুধুমাত্র শচীনের সেঞ্চুরি বলতে রাজি নন। তার চেয়ে বরং বিজেপি-র ঘূর্ণি পিচে তরুণ শচীন এবং প্রবীন অশোক গেহলটের পার্টনারশিপ বলেই মনে করছেন অনেকে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে কে বসবেন সেই জল্পনা রয়েইছে।
সাত তারিখ সন্ধে বেলা চ্যানেলে চ্যানেলে প্রকাশিত এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই ইঙ্গিত মিলেছিল এ বার কংগ্রেসের সরকার হচ্ছে রাজস্থানে। সে দিন থেকেই এই জল্পনা তুঙ্গে। মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল সমীক্ষার পূর্বাভাস মিলে গিয়েছে। কংগ্রেসেরই সরকার হচ্ছে সেখানে। ২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় ভোট হয়েছে ১৯৯টি আসনে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে একটি আসনে ভোট স্থগিত ঘোষণা করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তাই সরকার গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার এখন ১০০। এবং কংগ্রেস সেই ম্যাজিক ফিগারের থেকে চারটি বেশি আসন নিয়ে জয়পুরে রাজ্যপালের বাসভবনে সরকার গড়ার দাবি নিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে বুধবার সকালে বিধায়ক দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে সাবেক দলের তরফে।
শচীন নাকি অশোক? কেন এই জল্পনা?
রাহুল গান্ধীর অত্যন্ত স্নেহধন্য শচীন রাজেশ পাইলট। বাবা রাজেশ পাইলট ছিলেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা তথা সাংসদ। প্রথম জীবনে বিবিসি-র দিল্লি ব্যুরোর কর্মচারী হিসেবে চাকরি করেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা তথা জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহের জামাই শচীন। কাজ করেছেন মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা জেনারেল মোটরস-এও। এরপরই ঝকঝকে চেহারার এই তরুণ পুরো সময় রাজনীতিতে যোগ দেন। কংগ্রেস সাংসদও করে তাঁকে। দ্বিতীয় মনমোহন সিং সরকারের সময় কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সমন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি। রাহুল গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পরই দিল্লি থেকে রাজস্থানে পাঠিয়েছিলেন তাঁকে। রাজস্থান কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে গোটা রাজ্য কার্যত চষে বেরিয়েছিলেন শচীন। মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত করতে দিন-রাত এক করে নির্বাচনী মেশিনারি সাজিয়েছিলেন শচীন।
অনেকে বলেন, শচীনকে সামনে রেখেই রাজস্থানের সংগঠন ধরতে চেয়েছিলেন রাহুল। তাই বর্ষীয়ান নেতা অশোক গেহলটকে রাজ্য থেকে নিয়ে গিয়ে দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য করে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজস্থানের ভোট আসতেই, অশোক গেহলট দিল্লির থেকে বেশি মন দিতে শুরু করেছিলেন রাজ্যের দিকে। পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজস্থানের মতো রাজ্য, যেখানে এত জাতপাতের রাজনীতির প্রভাব, সেখানে অশোক গেহলট একটা বড় অংশের নিয়ন্ত্রকও বটে। ৮০ সাল থেকে ৯৯ সাল পর্যন্ত টানা রাজস্থান থেকে জিতে সংসদে গিয়েছেন এই নেতা। তারপর ৯৯ থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি রাজস্থানের বিধায়ক। সব মিলিয়ে ৩৮ বছরের সংসদীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তাই সব দিক ভেবেই সত্তরের দোরগোড়ায় পৌঁছনো অশোক গেহলটকে দিল্লিতে আটকে রাখেননি রাহুল।
রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, শচীনের বয়স কম। রাজস্থানের মতো জটিল রাজনৈতিক সমীকরণের রাজ্যে এক্ষুণি হয়তো সবটা সামলাতে পারবেন না। সে দিক থেকে অশোক গেহলটই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগ্য ব্যক্তি। কিন্তু রাহুল ঘনিষ্ঠদের অনেকের মতেই, শচীনকে বাদ দিয়ে যদি নানান রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় অশোক গেহলটকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হয়, তাহলে শচীনের সঙ্গে সেটা খানিকটা অবিচারই হবে!
Be the first to comment